প্রবল বৃষ্টিপাত ও তার জেরে ধেয়ে আসা ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসে কার্যত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সিকিম (Sikkim)। রাজ্যের একাধিক এলাকা জলের তলায়, রাস্তা বন্ধ, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এরই মধ্যে ছাতেন থেকে সেনার হেলিকপ্টারে করে উদ্ধার করা হয়েছে ৬৩ জনকে। তবে এখনও পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ১৫ জন (Sikkim)।
২৯ মে থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতের ওপর দিয়ে প্রবল বর্ষণ শুরু হয়। টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ে ধস নামে, বন্যায় প্লাবিত হয় বহু জনপদ। পরিস্থিতি সবচেয়ে জটিল হয়ে ওঠে সিকিমে (Sikkim)। পাহাড়ি রাস্তা ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বহু পর্যটন এলাকা। আটকে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ।
সূত্র মারফত জানা গেছে, এখন পর্যন্ত প্রায় ১৮০০ পর্যটককে উদ্ধার করা হয়েছে রাজ্যের (Sikkim) বিভিন্ন এলাকা থেকে। এর মধ্যে অনেকেই ছিলেন স্থানীয় গাইড, ড্রাইভার, হোটেল কর্মী—তাঁদের ভবিষ্যত এখন অন্ধকার।
মিনিস্ট্রি অব ডিফেন্স-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সিকিমে (Sikkim) উদ্ধার ও ত্রাণে নিযুক্ত রয়েছে চারটি MI-17 হেলিকপ্টার ও দুটি চিতা হেলিকপ্টার। এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০০০ কেজি ত্রাণসামগ্রী দুর্গত এলাকায় পাঠানো হয়েছে। খাদ্যসামগ্রী, ওষুধ, জলের বোতল, ত্রিপল—এইসব জরুরি জিনিস হেলিকপ্টার থেকে ফেলা হচ্ছে দুর্গম গ্রামে।
তবে প্রশ্ন উঠছে—এত বড় বিপর্যয় সামলাতে কি পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছিল প্রশাসনের? বর্ষা শুরু হতেই যে পাহাড়ি অঞ্চলে ধস নামার আশঙ্কা থাকে, সেখানে আগাম সতর্কতা, পর্যটকদের নিয়ন্ত্রণ, জরুরি সরবরাহের ব্যবস্থা—এইসব কিছুতেই কি ঘাটতি ছিল না?
নিখোঁজদের পরিবারের কান্না থামছে না। সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন এই বলে যে, যখন বড় মাপের রাজনৈতিক কর্মসূচি বা উৎসব হয়, তখন প্রশাসনের নজর থাকে সর্বত্র। কিন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সেই তৎপরতা কোথায়?
এখনও বহু এলাকা বিদ্যুৎহীন, মোবাইল পরিষেবা বন্ধ। রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় বহু জায়গায় হেলিকপ্টারই একমাত্র ভরসা। কিন্তু সব জায়গায় কি সেই সাহায্য পৌঁছচ্ছে?
যদিও কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের তরফে সিকিমের পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক তৎপরতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে পরিস্থিতি অত্যন্ত করুণ।
এই পরিস্থিতিতে শুধুই প্রকৃতির রোষ নয়, প্রশ্ন উঠছে মানুষের দায় নিয়েও। সতর্কতা, পরিকল্পনা, প্রস্তুতির অভাব—সব মিলিয়ে সিকিমে আরও একবার প্রকাশ্যে এল পাহাড়ি রাজ্যের দুর্বলতা। আর তার খেসারত দিচ্ছে সাধারণ মানুষ, দিশেহারা পর্যটক, নিখোঁজের পরিবার।