চাকরি হারানো গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি কর্মীদের জন্য রাজ্য সরকার যে ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সেই সিদ্ধান্তে শুক্রবার অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করেছে কলকাতা হাই কোর্ট। বিচারপতি অমৃতা সিনহার সিঙ্গল বেঞ্চ এই নির্দেশ দেয়। আদালতের রায় অনুযায়ী, আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজ্য সরকার এই ভাতা কোনওভাবেই দিতে পারবে না। এর ফলে রাজ্যের উপর আরও চাপ সৃষ্টি হল এবং রাজনীতির ময়দানে তৈরি হল নতুন বিতর্ক (Firdous Shamim)।
এই মামলার এক গুরুত্বপূর্ণ আইনজীবী ফিরদৌস শামিম (Firdous Shamim) আদালতের রায়ের পর বলেন, “যাঁরা সাদা খাতা জমা দিয়ে গ্রুপ সি ও ডি-র চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের কেন ভাতা দেওয়া হবে?” তাঁর দাবি, রাজ্য সরকার আসলে দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের রক্ষা করতেই এই ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তাঁর (Firdous Shamim) মতে, এটা ছিল এক ধরনের পিঠ বাঁচানোর পরিকল্পনা। কারণ, সিবিআই যাতে তাঁদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করতে না পারে, সেই জন্যই মুখ বন্ধ করতে টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছিল।
ফিরদৌস শামিম (Firdous Shamim) আরও বলেন, “এই সিদ্ধান্ত কোনও মানবিক ভাবনা থেকে আসেনি, এটা দুর্নীতির জালকে ঢাকতে নেওয়া পদক্ষেপ। পর্বতপ্রমাণ দুর্নীতির পিছনে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে সরকারি আধিকারিক থেকে শুরু করে মন্ত্রিসভার সদস্যও রয়েছেন। আদালত আগে নির্দেশ দিয়েছিল, যাঁরা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের কাছ থেকে টাকা ল্যান্ড রেভিনিউ হিসেবে আদায় করতে হবে। কিন্তু রাজ্য সরকার আজও সেই পথে কোনও পদক্ষেপ করেনি।”
তিনি এ-ও (Firdous Shamim) বলেন যে, “যাঁরা চাকরি হারিয়েছেন, তাঁদের অনেকেই দুর্নীতির মাধ্যমে চাকরি পেয়েছিলেন। তাঁদের জনগণের করের টাকা দিয়ে ভাতা দেওয়া যায় না। তাছাড়া, যদি এই ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত বহাল থাকত, তাহলে সিবিআই তদন্তে অনেক বড় নাম উঠে আসতে পারত। সেই ঝুঁকি না নিতে চেয়েই এই ঘুরপথে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হচ্ছিল।”
উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০১৬ সালের এসএসসি প্যানেল বাতিল হওয়ার পর প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি চলে যায়। পরে আদালতের নির্দেশে শুধু ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে থাকার অনুমতি মেলে। কিন্তু গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি কর্মীরা স্কুলে যোগ দিতে পারেননি। সেই কারণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, এঁদের জন্য ভাতা চালু করা হবে। গ্রুপ সি কর্মীদের মাসে ২৫ হাজার টাকা ও গ্রুপ ডি কর্মীদের ২০ হাজার টাকা ভাতা দেওয়ার কথা জানানো হয়েছিল। এই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে মামলা করা হয় হাই কোর্টে।
বিচারপতি অমৃতা সিনহা পূর্বেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, যদি বাড়িতে বসে চাকরিহারারা ভাতা পান, তাহলে বেকাররা কেন পাবেন না? এবার আদালতের অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশে স্পষ্ট, এই ভাতা আপাতত বন্ধ। এখন রাজ্য সরকারকে চার সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা জমা দিতে বলা হয়েছে। তারপর বিরোধী পক্ষও তাদের হলফনামা দেবে। তারপর মামলার ফের শুনানি হবে। এই রায় যে রাজ্যের জন্য বড় ধাক্কা, তা নিয়ে সংশয় নেই।