উত্তরবঙ্গের একের পর এক শহর এখন নতুন করে ভয় পাচ্ছে এক বিপদের আশঙ্কায় (North Bengal)—হঠাৎ হড়পা বান বা আকস্মিক বন্যা। দীর্ঘদিন ধরে চলা বেহিসাবি বালি উত্তোলন, নদী দখল আর প্রাকৃতিক নালাগুলোর অবরোধের ফলে নদীগুলো যেমন হারিয়েছে তাদের স্বাভাবিক নাব্যতা, তেমনই হারিয়েছে জলধারণের ক্ষমতাও। আর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, এবারের বর্ষায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হতে পারে। যদিও বর্ষা এখনও পুরোপুরি জাঁকিয়ে বসেনি, কিন্তু ইতিমধ্যেই একাধিক জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে অতি ভারী বর্ষণের জেরে তৈরি হয়েছে আতঙ্কজনক পরিস্থিতি (North Bengal)।
নদী গবেষক ও পরিবেশবিদরা মনে করছেন, একটানা বৃষ্টি যদি নামে, তবে যে নদীগুলো এখন শুকিয়ে গিয়েছে কিংবা দখলের শিকার হয়েছে, সেগুলো আর অতিরিক্ত জল ধারণ করতে পারবে না। সেই জল ফেরার (North Bengal) পথ না পেয়ে ঘুরে যাবে শহর ও জনপদের দিকে। যার ফলে পরিস্থিতি হয়ে উঠবে ভয়াবহ। জুন মাসের শুরুতেই উত্তরের বহু শহরে এমন চিত্র দেখা গেছে—সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তায় জল দাঁড়িয়ে যাচ্ছে, নিকাশি ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়ছে। তবে সৌভাগ্যবশত কয়েকঘণ্টার বৃষ্টির বিরতি ও শুকনো মাটির জল শোষণের ফলে পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দেওয়া যাচ্ছে।
শুধু শিলিগুড়ি নয়, বিপদের মুখে রয়েছে জলপাইগুড়ি, ময়নাগুড়ি, ধূপগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার—এই সব (North Bengal) শহরগুলো। জলপাইগুড়ি শহরের করলা নদী এখন প্রায় মৃতপ্রায়, নাব্যতা হারিয়ে নদীর চেহারাটাই বদলে গেছে। ধরধরা নদী দখলের ফলে অস্তিত্ব সংকটে। ময়নাগুড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ধরলা নদীর পাড় দখল করে চলছে তেজপাতার চাষ, অথচ প্রশাসনের কোনও নজর নেই। একইভাবে, যথেচ্ছ বালি উত্তোলনের ফলে জরদা নদী এখন মরণাপন্ন। শিলিগুড়ির বালাসন নদী, ধূপগুড়ির কুমলাই নদী—সব নদীগুলোরই একই দশা।
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও নদী গবেষক সুবীর সরকার স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, “যেভাবে নদীগুলো দখল হচ্ছে, তাতে আগামীতে ভয়াবহ বিপদ ঘটবে। নদী তার নিজস্ব পথ ফেরত নিতে চাইবে, তখন সেটা কে আটকাবে?” কিন্তু সেই সতর্কবার্তা শুনছে কে? প্রশাসনের উদাসীনতা, মানুষের অবিবেচক আচরণ ও অবাধ বালি উত্তোলনের জেরে, অচিরেই ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে চলেছে উত্তরবঙ্গ।
