এক অসাধারণ ঘটনা ঘটেছে মালদহের (Maldah) চাঁচলে। নেপাল থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার পথ সাইকেল চালিয়ে ভারতীয় সীমান্ত পেরিয়ে চাঁচলের (Maldah) গৌরহন্ড এলাকায় এসে পৌঁছল এক মূক ও বধির কিশোর। তার নাম শশী যাদব। সে কথা বলতে বা শুনতে না পারলেও তার মধ্যে ছিল এক প্রবল জেদ, দৃঢ় মনোবল আর হার না মানার ইচ্ছা।
চাঁচল থানার (Maldah) পুলিশ প্রথমে ওই কিশোরকে দেখতে পায়, যাকে দেখে বোঝা যাচ্ছিল না সে কোথা থেকে এসেছে বা তার পরিচয় কী। কিশোরটি কথা বলার চেষ্টা করছিল, কিন্তু পুলিশ তৎক্ষণাৎ বুঝে যায় সে মূক ও বধির।
তাকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে পুলিশের (Maldah) সন্দেহ হয় সে হয়তো হারিয়ে গিয়েছে। পরিচয় জানার চেষ্টায় তারা যোগাযোগ করে চাঁচল এলাকার এক বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সাহানা পারভিনের সঙ্গে, যিনি মূক ও বধির শিশুদের শেখান।
তবে সমস্যা হয় তখন, যখন বোঝা যায় শশী অবাঙালি। ফলে সাহানা পারভিনের ভাষা ও নির্দেশনাও তার কাছে বোধগম্য হচ্ছিল না। অনেক চেষ্টা করেও যখন কোনও কিছু বোঝা যাচ্ছিল না, তখন পুলিশ তার হাতে একটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন দেয়।
মোবাইল হাতে পেয়ে শশী নিজেই গুগল ম্যাপ খুলে নিজের অবস্থান ও ঠিকানা বোঝাতে শুরু করে। শুধু তাই নয়, সে একটি পতাকার ছবি আঁকে, যেটা দেখে সাহানা পারভিন নিশ্চিত হন সে নেপালের নাগরিক।
তৎক্ষণাৎ পুলিশ নেপালের খুট্টা এলাকায় যোগাযোগ শুরু করে। একটি সমাজসেবী সংস্থার সাহায্যে তারা ভিডিও কলের মাধ্যমে শশীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়। সেখানে জানা যায়, কিশোরটির নাম শশী যাদব এবং তার মায়ের নাম বিভা দেবী যাদব।
পরবর্তীতে বিভা দেবী এবং শশীর আত্মীয়রা নেপাল থেকে চাঁচল থানায় এসে পৌঁছান। যথাযথ পরিচয়পত্র, নথিপত্র যাচাই করে, সমস্ত আইনি প্রক্রিয়া মেনে চাঁচল থানার আইসি পূর্ণেন্দু কুণ্ডু শশীকে তার মায়ের হাতে তুলে দেন।
এই ঘটনায় সবাই অবাক। ১০ দিন ধরে একজন মূক ও বধির কিশোর একা সাইকেল চালিয়ে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে নেপাল থেকে ভারতের মধ্যে ঢুকে পড়েছে, সেটা যেন সিনেমার চিত্রনাট্যকেও হার মানায়।
চাঁচল থানার পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন এবং বিশেষ শিক্ষিকার মানবিকতা ও দ্রুত পদক্ষেপের জন্য শশী যাদব তার মায়ের কোলে ফিরে যেতে পেরেছে। এলাকাবাসী এই ঘটনায় পুলিশ ও শিক্ষিকার ভূমিকাকে স্যালুট জানিয়েছেন।