মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ হয়ে উঠছে। ইজরায়েল এবং ইরানের (Iran) মধ্যে শুরু হয়েছে লাগাতার হামলা-পাল্টা হামলা। এই সংঘর্ষের মাঝে তীর্থে (জিয়ারাত) গিয়ে ইরানে আটকে পড়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গার চৌরাশি গ্রামের ঢালিপাড়ার তিনটি পরিবারের মোট ৯ জন মানুষ। তাঁদের মধ্যে দুইজন শিশু রয়েছে। পাশাপাশি, একই গ্রামের কয়েকজন ছাত্রও ইরানে (Iran) পড়াশোনা করতে গিয়ে সেখানেই রয়ে গিয়েছেন বলে খবর মিলেছে। সব মিলিয়ে ১১-১২ জনের মতো এই মুহূর্তে ইরানের ‘যুদ্ধবিধ্বস্ত’ পরিস্থিতির মাঝে আটকে রয়েছেন। এই খবরে আতঙ্কিত ও চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
পরিবার ও প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৩০ মে ওই পরিবারগুলি তীর্থযাত্রার উদ্দেশ্যে ইরানের রাজধানী তেহরানের (Iran) দিকে রওনা দিয়েছিলেন। আটকে পড়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন সেলিম আলি মণ্ডল, তাঁর স্ত্রী সেহুলি বিবি, তাঁদের দুই সন্তান, গফুর মণ্ডল ও স্ত্রী সুকরান বিবি, আক্রম মণ্ডল, সাহিদ আলি গাইন ও তাঁর স্ত্রী মোসলেমা বিবি। যুদ্ধ পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে তাঁরা তেহরান থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে কুম শহরে গিয়ে উঠেছেন বলে জানা গিয়েছিল।
কিন্তু মঙ্গলবারের পর থেকে তাঁদের কারও সঙ্গে আর কোনও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তাঁদের মোবাইল বন্ধ, কোনও হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজেও সাড়া নেই (Iran)। বুধবার তাঁদের দেশে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু এখনও অবধি তাঁরা ফিরতে পারেননি বা তাঁদের বর্তমান অবস্থান নিশ্চিত করে জানা যায়নি। সাহিদ আলির ছেলে হোসেন মেহেদি জানিয়েছেন, “বাবা-মা সহ কাকু-কাকিমারা তীর্থ করতে গিয়েছিলেন। মঙ্গলবার পর্যন্ত কথা হয়েছে, কিন্তু তারপর থেকে কিছুই জানতে পারছি না। আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ করছি, দয়া করে তাঁদের সুস্থভাবে ফিরিয়ে আনা হোক।”
গ্রামের বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, “তীর্থযাত্রী ছাড়াও ২-৩ জন ছাত্র ইরানে (Iran) রয়েছে, যারা স্থায়ী ভিসায় পড়াশোনা করছিল। তাদের নিয়েও আমরা খুব দুশ্চিন্তায় রয়েছি। যুদ্ধ পরিস্থিতি যেভাবে জটিল হয়ে উঠছে, তাতে আতঙ্ক বাড়ছে।”

এদিকে দেগঙ্গা পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, “আমরা পরিবারের পাশে আছি। তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। যদি আমাদের তরফ থেকে কিছু করার থাকে, আমরা নিশ্চয়ই সেটা করব।”
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। বারাসতের মহকুমা শাসক সোমা দাস জানিয়েছেন, “তিনজন মহিলা ও দুই শিশুসহ মোট ৯ জনের আটকে থাকার তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে। শুক্রবারই এই বিষয়ে জেলা প্রশাসনের তরফে রাজ্যের হোম অ্যান্ড হিল অ্যাফেয়ার্স দপ্তরে জানানো হয়েছে।”
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার থেকে ইজরায়েল ইরানের একাধিক অঞ্চলে বিস্ফোরক হামলা চালাচ্ছে। ইতিমধ্যেই ৫০০-র বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালেও দুই দেশের মধ্যে পাল্টা হামলা হয়েছে। এমন সময়ে ইরানের মাটিতে আটকে পড়া সাধারণ ভারতীয়দের নিরাপদে দেশে ফেরাতে সক্রিয় হয়েছে প্রশাসন।