ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনেইর (Ayatollah Khamenei) উপর ইসরায়েলের হামলার সম্ভাবনা নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা সম্প্রতি এ বিষয়ে নিশ্চিত কিছু না বললেও এই সম্ভাবনাকে সরাসরি অস্বীকারও করেননি। কয়েকদিন আগেই ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (IRGC)-এর এক শীর্ষ কমান্ডার ইসরায়েলের হামলায় নিহত হন, তারপর থেকেই আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে—যদি খামেনেইর (Ayatollah Khamenei) কিছু হয়, তবে কে হবেন তাঁর উত্তরসূরি?
অনেকের ধারণা ছিল, তাঁর দ্বিতীয় ছেলে মোজতবা খামেনেই হয়তো দেশের নেতৃত্বে আসতে পারেন। তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, এটা সহজ হবে না। কারণ ইরানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক নিয়ম এবং ইসলামিক মূল্যবোধ অনুযায়ী বংশানুক্রমিক শাসন “অইসলামিক” বলে গণ্য। ১৯৭৯ সালে শাহের পতনের পর ইসলামি বিপ্লবের নেতা আয়াতোল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেইনি (Ayatollah Khamenei) এই মতবাদকে তীব্রভাবে নিন্দা করেছিলেন। তিনি মনে করতেন, বংশানুক্রমিক নেতৃত্ব একপ্রকার অবৈধ রাজতন্ত্র। এই দৃষ্টিভঙ্গি তাঁর ২১ খণ্ডের ‘সাহিফেই ইমাম খোমেইনি’ গ্রন্থে বিস্তারিতভাবে লিপিবদ্ধ আছে।
খোমেইনির (Ayatollah Khamenei) এই নীতির পথেই হাঁটেন বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা খামেনেই। তাই তিনি নিজেও পারিবারিক উত্তরাধিকারের ধারণাকে ইসলামি রাষ্ট্রচিন্তার বিরোধী বলে অভিহিত করেছেন।
তবে খামেনেইর ছেলে মোজতবা অনেকদিন ধরেই ধর্মীয় মহলে প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তবুও তাঁর উত্তরাধিকারী হওয়ার পথে বড় বাধা হল ইরানের সংবিধান এবং ইসলামি মূল্যবোধ। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি খামেনেইর মৃত্যু ঘটে বা তিনি ক্ষমতা হারান, তাহলে তাঁর ছেলের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা খুবই কম।
এদিকে খোমেইনির (Ayatollah Khamenei) অবদান ও স্মৃতি আজও ইরানে অতি গুরুত্বপূর্ণ। রাজধানী তেহরানে তাঁর ছবি দেখা যায় ব্যাংকের নোট, স্কুলের বই ও সরকারি অফিসের দেয়ালে। তেহরানে ঢোকার পথে তাঁর সুবর্ণ গম্বুজওয়ালা সমাধি আজও এক ঐতিহাসিক নিদর্শন। তিনি ১৯৮৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন, কিন্তু তাঁর প্রভাব আজও তীব্রভাবে বর্তমান।
সিআইএর ১৯৮৩ সালের এক রিপোর্টে বলা হয়েছিল, খোমেইনি (Ayatollah Khamenei) না থাকলে ইরানি বিপ্লব কখনও সফল হতো না। তাঁর অডিও ভাষণগুলো ইরানের দরিদ্র জনগণের মনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। তাঁর বক্তব্যে ছিল পুনরাবৃত্তি, ছন্দ, কাব্যিক চিত্র এবং তীব্র রাজনৈতিক কৌতুক। সেগুলোর মধ্যে ছিল একধরনের মন্ত্রসিদ্ধ প্রভাব, যেখানে শ্রোতাদের মধ্যে নির্ধারিত ব্যক্তিরা স্লোগান তুলে উত্তেজনা সৃষ্টি করতেন।

খোমেইনির চিন্তা ছিল—“ইসলাম মানেই রাজনীতি।”
আবার অনেকেই জানেন না যে খোমেইনির পূর্বপুরুষ ছিলেন ভারতের উত্তরপ্রদেশের বরাবংকির কিন্তুরের বাসিন্দা। তাঁর দাদা সৈয়দ আহমদ মুসাভি হিন্দি এক শিয়া আলেম হিসেবে ভারত থেকে ইরানে গিয়েছিলেন ইসলামি শিক্ষার প্রসারে। ১৮৩০ সালে তিনি ইরাক হয়ে ইরানে যান এবং খোমেইন শহরে স্থায়ী হন। তাঁরই সন্তান মোস্তাফা ছিলেন খোমেইনির পিতা।
আহমদ হিন্দি তিনটি বিয়ে করেছিলেন এবং তাঁর পরিবারের অনেক সদস্য ইরানে ধর্মীয় শিক্ষা ও রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। তাঁর স্মৃতিতে তিনি ‘হিন্দি’ উপাধি ধারণ করে গিয়েছিলেন এবং কারবালায় সমাহিত হন।
এভাবেই ভারতের বরাবংকি থেকে এক ধর্মীয় যাত্রা শুরু হয়ে পৌঁছে যায় তেহরানের সর্বোচ্চ ক্ষমতার কেন্দ্রে। সেই বংশেরই উত্তরাধিকার নিয়ে আজ প্রশ্ন উঠছে ইরানে, যদি খামেনেইর কিছু হয়, তবে কী হবে দেশটির ভবিষ্যৎ?