অবশেষে অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে আছড়ে পড়ল ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’ (Cyclone Montha)। মঙ্গলবার বিকেলে ল্যান্ডফল শুরু হতেই উপকূল জুড়ে তাণ্ডব শুরু। প্রবল বৃষ্টি, দমকা হাওয়া, সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ে তছনছ উপকূলের একাধিক জেলা। ইতিমধ্যেই প্রাণ হারিয়েছেন এক মহিলা। কনাসীমা জেলায় প্রবল হাওয়ায় একটি গাছ ভেঙে পড়ে বাড়ির উপর, ঘটনাস্থলেই মৃত্যু তাঁর। পাশাপাশি, প্রবল দমকা হাওয়ায় (Cyclone Montha) নারকেল গাছ উপড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন এক অটোচালক ও এক কিশোর।
ভারতীয় আবহাওয়া দফতর (IMD) জানিয়েছে, ‘মন্থা’র ল্যান্ডফল প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে অন্ধ্র উপকূলের মাচিলিপটনম ও কাকিনাড়ার মাঝামাঝি এলাকায়। তিন থেকে চার ঘণ্টা চলবে এই ল্যান্ডফল, যার সঙ্গে থাকবে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি, ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া এবং সমুদ্রের প্রলয়ংকর ঢেউ। ঝড়ের দাপটে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে একাধিক উপকূলীয় শহরে। কাকিনাড়া, পূর্ব গোদাবরী ও কনাসীমা জেলায় গাছ উপড়ে পড়েছে, ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, থমকে গিয়েছে পরিবহন ব্যবস্থা।
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, মন্থা এখন অন্ধ্র উপকূল পেরিয়ে উত্তর-উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে (Cyclone Montha)। এর সর্বোচ্চ বেগ ঘণ্টায় ১১০ কিমি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। ইতিমধ্যেই কাকিনাড়া, মাচিলিপটনম ও কলিংগাপটনমের মধ্যে সমুদ্র উত্তাল। জেলেদের সমুদ্রে যেতে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কাকিনাড়া ও কৃষ্ণাপট্টনম বন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী নারা চন্দ্রবাবু নাইডু রাজ্যজুড়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি (Cyclone Montha) করেছেন। উপকূলবর্তী ৩৯টি বিধানসভা এলাকায় শুরু হয়েছে দুর্যোগ মোকাবিলা ব্যবস্থা। স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও উদ্ধারকারী দলগুলির মধ্যে সমন্বয় রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে জানানো হয়েছে, প্রতিটি জেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী ও নৌবাহিনী মোতায়েনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিকে ওড়িশারও একাধিক জেলায় মন্থার প্রভাবে শুরু হয়েছে ভারী বৃষ্টি। নিচু এলাকায় জল ঢুকে পড়ার আশঙ্কায় বহু মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (NDRF) ও স্থানীয় প্রশাসন একসঙ্গে উদ্ধার কাজে নেমেছে।
IMD ইতিমধ্যেই অন্ধ্র ও ওড়িশার একাধিক উপকূলীয় জেলায় জারি করেছে ‘রেড অ্যালার্ট’। সম্ভাব্য জলোচ্ছ্বাস ও ঝোড়ো হাওয়ার কারণে নিচু এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সমুদ্রের বুকে এখন শুধু উত্তাল ঢেউ— তাতে লড়ছে উপকূলের মানুষ, প্রকৃতির সঙ্গে এক নিঃশব্দ যুদ্ধ।
মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত বজায় থাকবে মন্থার তাণ্ডব। এরপর ধীরে ধীরে উত্তরবঙ্গ, ছত্তীসগঢ় ও বিহারের দিকে অগ্রসর হবে ঝড়ের অবশিষ্টাংশ। তবে আপাতত দক্ষিণ ভারতের উপকূলজুড়ে প্রকৃতির রুদ্ররূপে শ্বাসরুদ্ধ সাধারণ মানুষের রাত।









