মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদার নেলিস এয়ারফোর্স বেসের কাছে একাধিক ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে (Nuclear Site)। এটি সেই এলাকাতেই অবস্থিত, যেখানে একসময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার জন্য গোপন স্থাপনাগুলো তৈরি করেছিল, যা শেষ হয়েছিল ১৯৯২ সালে (Nuclear site)।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (USGS) জানায়, স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৫২ মিনিটে প্রথম ভূমিকম্পটি হয় (Nuclear Site)। এটি ছিল রিখটার স্কেলে ৩.৩ মাত্রার। ভূমিকম্পটির উৎপত্তি ছিল নেলিস এয়ারফোর্স বেস থেকে প্রায় ১৪ মাইল উত্তর-পূর্বে। এরপর আরও দুটি ছোট ভূকম্পন হয় কাছাকাছি এলাকায়।
এই ভূমিকম্পগুলো হয়েছিল ক্যালিফোর্নিয়া ওয়াশ ফল্ট লাইনে (Nuclear Site), যা পশ্চিম আমেরিকার এক বিশাল ভূ-প্রাকৃতিক অঞ্চল — বেসিন অ্যান্ড রেঞ্জ প্রদেশের অন্তর্গত। এই ফল্ট লাইনের ক্ষমতা রয়েছে ৬.৫ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প সৃষ্টির।
যদিও এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি, তবে উত্তর লাস ভেগাস পর্যন্ত মানুষ কম্পন অনুভব করেছেন বলে জানিয়েছেন।
অনেকে মনে করেন, ভূমিকম্পের স্থানটি যতটা ভূতাত্ত্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক ততটাই রহস্যময় ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক দিক থেকেও।
নেলিস এয়ারফোর্স বেস, যেখানে এই ভূমিকম্প হয়, সেটি একসময় ছিল পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার কেন্দ্রস্থল। ১৯৫০ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যান এই এলাকাকে “নেভাদা প্রুভিং গ্রাউন্ডস” হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর এটি হয়ে ওঠে নেভাদা টেস্ট সাইট (NTS)।
১৯৫১ থেকে ১৯৬২ সালের মধ্যে এখানে ১০০টি পারমাণবিক বিস্ফোরণ করা হয় আকাশে। কিন্তু ১৯৬৩ সালে লিমিটেড টেস্ট ব্যান ট্রিটি অনুযায়ী এই পরীক্ষা চলে যায় মাটির নিচে। তখন থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত এখানে ৮২৮টি ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক বিস্ফোরণ চালানো হয়। শেষ পরীক্ষার কোডনাম ছিল “ডিভাইডার”, যার মাধ্যমে পারমাণবিক পরীক্ষার এক যুগ শেষ হয়।
এই নিষেধাজ্ঞা এবং স্নায়ুযুদ্ধের অবসান — এই দুটি ঘটনা একসঙ্গে মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্র স্থায়ীভাবে এই অঞ্চলটিকে পারমাণবিক পরীক্ষার বাইরে রেখে দেয়।
আজও নেলিস বেস ও তার আশেপাশের এলাকাগুলো মার্কিন সামরিক বাহিনীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই এলাকাটি শুধু যুদ্ধ বা সামরিক তৎপরতা দিয়ে নয়, বরং রহস্য, গুজব ও এলিয়েন বিষয়ক ষড়যন্ত্র দিয়েও বহু দশক ধরে সাধারণ মানুষের কল্পনার খোরাক হয়ে আছে।
এই এলাকায় অবস্থিত এরিয়া ৫১ হলো বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত গোপন সামরিক ঘাঁটি। ১৯৮৯ সালে বিজ্ঞানী বব লাজার দাবি করেন, তিনি সেখানে এলিয়েন প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণার কাজে নিযুক্ত ছিলেন। এরপর থেকেই এটি বিশ্বব্যাপী ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ও পপ কালচারের অন্যতম আলোচিত কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
২০১৩ সালে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা CIA প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে এরিয়া ৫১-এর অস্তিত্ব স্বীকার করে। তারা জানায়, এই ঘাঁটিটি মূলত U-2 ও A-12 নামক উচ্চ-উচ্চতায় উড়তে সক্ষম গোয়েন্দা বিমান তৈরি এবং পরীক্ষার জন্য ব্যবহৃত হতো। সেসব বিমানের গতিবিধিই ছিল বহু ‘UFO দেখা যাওয়ার’ ঘটনার পেছনের কারণ।