ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার ভেতরে গা-ঘেঁষাঘেঁষি করে গড়ে ওঠা এক বসতির নাম ‘জেনেভা ক্যাম্প’, যাকে স্থানীয়রা অনেকেই ‘মিনি পাকিস্তান’ (Mini Pakistan) বলে ডাকেন। এই ক্যাম্পটি দীর্ঘদিন ধরেই বসবাসরত হাজার হাজার উর্দুভাষী মুসলমান এবং বিহারিদের বসতি, যারা মূলত ভারতীয় উপমহাদেশের বিভক্তির পর পাকিস্তানের (Mini Pakistan) অংশ হিসেবে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন।
সম্প্রতি এই জেনেভা ক্যাম্পের (Mini Pakistan) একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যা ধারণ করেছেন ইনফ্লুয়েন্সার আরকে সোহান। ভিডিওতে ক্যাম্পের দুর্দশাগ্রস্ত পরিবেশ এবং ভয়াবহ অব্যবস্থার (Mini Pakistan) চিত্র ফুটে উঠেছে।
জানা গেছে, এই ক্যাম্পে বর্তমানে বিভিন্ন সশস্ত্র গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য চলছে। এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব গ্যাং পুলিশের থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়েছে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়। সেসময় দেশজুড়ে সরকার পরিবর্তনের আন্দোলনে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই বিহারিরা পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নেয় বলে অনেকেই মনে করেন। ফলে যুদ্ধের পর এদের ওপর নেমে আসে ঘৃণা ও নিপীড়ন। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ উভয় দেশই এদের নাগরিকত্ব দিতে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে তারা রাষ্ট্রহীন অবস্থায় থেকে যায়।
এই মানুষদের জন্য রেড ক্রস ১৯৭২ সালে জেনেভা ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করে। আজ পর্যন্ত সেটি বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ এবং অনুন্নত শহুরে বস্তিগুলোর একটি।
উর্দু ভাষা, পাকিস্তানি পোশাক ও খাদ্যাভ্যাসের কারণে তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের মূলস্রোতের সংস্কৃতির ফারাক রয়ে গেছে। অনেকেই এখনো পাকিস্তানের প্রতি আবেগপ্রবণ, যা ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই সন্দেহ ও বিদ্বেষ বিরাজ করছে।
বর্তমানে এই ক্যাম্পে হিংসা ও অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ বাড়ছে, যা প্রশাসনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের ভেতরে এই ‘মিনি পাকিস্তান’ কি ভবিষ্যতে আরও বড় নিরাপত্তা হুমকিতে পরিণত হবে, সেই আশঙ্কা এখন প্রকট হয়ে উঠছে।