পাঁশকুড়ার চিপসকাণ্ডের রেশ কাটতে না কাটতেই ফের মর্মান্তিক ঘটনা পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথিতে (Kanthi)। অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীর বিরুদ্ধে টিটকিরি কাটার অভিযোগ ওঠে নবম শ্রেণির ছাত্র সূর্য মান্নার বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগের জেরে মানসিকভাবে হেনস্থা হয়ে শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় ওই কিশোর। গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হয় সে (Kanthi)। মৃত্যুর আগে বাবা-মার উদ্দেশে রেখে যায় একটি চিঠি, যাতে লেখা, “বাবা আমি ভুল করিনি, আমি ওই মেয়েটিকে চিনি না।”
ঘটনাটি ঘটেছে কাঁথির(Kanthi) পিছাবনি এলাকায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সূর্য স্কুলে গিয়েছিল। সেখানে স্কুলেরই এক ছাত্রীর বিরুদ্ধে টিটকিরি কাটার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। সেই সময় সে তার কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে ছিল। সূর্য সাফ জানায়, সে ওই মেয়েটিকে চেনে না, কোনো কটূক্তিও করেনি (Kanthi)।
স্কুল থেকে ফেরার পর সূর্য ইংরেজি বই আনতে বন্ধুর বাড়িতে যায়। সেখান থেকে ফেরার পথে পিছাবনি বাজারে তাকে আটকানো হয়। অভিযোগ, তখনই তাকে মারধর এবং মানসিকভাবে অপমান করা হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান তার বাবা-মা। সূর্য সেখানেই বলেন, সে নির্দোষ। এরপর সে বাবা-মার সঙ্গে বাড়ি ফিরে আসে।
পরদিন শুক্রবার সকালে ঘরের দোতলায় কড়ি কাঠে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়ে সূর্য। পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।
পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করে, যেখানে সূর্য লিখে গেছে—“বাবা আমি সত্যিই কিছু করিনি। মেয়েটিকে আমি চিনি না। কিন্তু আমার জন্য তোমাকে অপমানিত হতে হয়েছে।” সেখানে একাধিক অভিমানের কথা রয়েছে।
ছেলের মৃত্যুর জন্য সরাসরি ওই ছাত্রীর বাবাকে দায়ী করেছেন সূর্যের বাবা রবীন্দ্রনাথ মান্না। তাঁর অভিযোগ, বৃহস্পতিবার বাজারে কিছু লোকজন নিয়ে এসে তাঁর ছেলেকে মারধর ও অপমান করেন মেয়ের বাবা। তিনি আরও জানান, “ছেলেকে জিজ্ঞাসা করলে বলে—আমি কিছুই করিনি। মেয়েটিকে আমি চিনি না। ওদের অপমান সহ্য করতে না পেরেই এই পথ বেছে নিয়েছে সূর্য।”
অন্যদিকে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই ছাত্রীর বাবা। তিনি দাবি করেন, “আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। সূর্যের বাবার ডাকে গিয়েছিলাম। ওরাই বলেছিল, মেয়ের মুখে যদি ছেলের নাম শোনেন, তাহলে মাথা নিচু করে চলে যাবেন। আমার মেয়ে বলেছিল, ওই ছেলেই টিটকিরি কেটেছিল। এরপর অন্যরা মেয়েকে সরিয়ে দেয়, আমি নিজেও সেখান থেকে চলে যাই। কাউকে মারধর করিনি।”
এই ঘটনার তদন্তে নেমেছে কাঁথি থানার পুলিশ। এক আধিকারিক জানান, মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত মে মাসেই পাঁশকুড়ায় চিপস চুরির অভিযোগে এক সপ্তম শ্রেণির ছাত্র আত্মহত্যা করেছিল। এবার সেই ঘটনার ছায়া যেন ফিরে এল কাঁথিতে—আবারও এক কিশোর, আবারও অপমান আর সেই চিরচেনা প্রশ্ন—আমরা কবে বুঝব মানসিক অত্যাচারও হত্যা?