একটিমাত্র ভুল বোঝাবুঝির জেরে বাবা-মার কোল ছেড়ে হোমে ঠাঁই হয়েছিল আড়াই বছরের একরত্তি শিশুর (Hoogly)। ৪২ দিন পর অবশেষে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে ফিরল সেই ছোট্ট মেয়ে তার পরিবারের কাছে।
ঘটনাটি ঘটেছে চুঁচুড়া (Hoogly) ও বাঁশবেড়িয়া এলাকায়। বাঁশবেড়িয়ার চক বাঁশবেড়িয়া মন্দিরতলার বাসিন্দা অশোক জেনা ও তাঁর স্ত্রী অনুপমার ছোট মেয়ে ঈশা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। গত ৫ মে তাঁরা মেয়েকে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি করেন (Hoogly)। তখন ঈশার মা অনুপমাকে ওড়িশা চলে যেতে হয়, কারণ তাঁর মা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।
ঈশা দুই দিনেই অনেকটা সুস্থ হয়ে ওঠে (Hoogly)। তখন হাসপাতাল থেকে তাকে ছুটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু সমস্যা বাঁধে তখনই। মা-বাবা না থাকায়, শিশুটিকে নিতে আসেন তার জ্যাঠা বটকৃষ্ণ। কিন্তু ভর্তির সময় অভিভাবক হিসেবে অন্যের নাম লেখা থাকায় হাসপাতাল বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। শিশুটিকে তুলে দিতে অস্বীকার করে তারা।
হাসপাতাল বিষয়টি জানায় চাইল্ড লাইনকে। চাইল্ড লাইন বিষয়টি চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির (CWC) কাছে তোলে। এরপর শিশুটিকে নিয়ে যাওয়া হয় নবগ্রাম হোমে। দিন পেরোয় একে একে ৪২টি। ঈশার মা ওড়িশা থেকে ফিরে এসে মেয়েকে পাওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করেন, কিন্তু কোনও ফল হয়নি।
শেষ পর্যন্ত স্থানীয় এক জুটমিলের শ্রমিক নেতা বাঁশবেড়িয়ার ওয়ার্ড নম্বর ১০-এর কাউন্সিলর দুর্গা রাওয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি বিষয়টি জানান ভাইস চেয়ারম্যান শিল্পী চট্টোপাধ্যায়কে। এরপর হস্তক্ষেপ করেন আইনজীবী ও হুগলি জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ নির্মাল্য চক্রবর্তী। তিনি যোগাযোগ করেন CWC-র চেয়ারপার্সন মনিদীপা ঘোষের সঙ্গে। কিন্তু আরও একটি জটিলতা তৈরি হয়—হোমের তরফে জানানো হয়, ঈশা নাকি মা-বাবাকে চিনতে পারছে না! তাই তাকে ‘অভিভাবকহীন শিশু’ হিসেবে ঘোষণা করার কথা ওঠে।
এই অবস্থায় হস্তক্ষেপ করেন অতিরিক্ত জেলা শাসক (উন্নয়ন) অমিতেন্দু পাল। জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিকের (DSWO) সঙ্গে আলোচনা করে অবশেষে শিশুটিকে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়। ঈশার বাবা অশোক জেনা বলেন, “একটা ছোট ভুল বোঝাবুঝির জন্য আমাদের মেয়েকে এতদিন ধরে হোমে থাকতে হল। আমরা দুঃখিত, আবার খুব খুশি।”
আইনজীবী নির্মাল্য চক্রবর্তী বলেন, “ঈশা বেশিরভাগ সময় জ্যাঠু-জ্যাঠিমার সঙ্গেই থাকে। ওর কাছে ওরাও মা-বাবার মতো। তাই বিভ্রান্তি হয়েছিল।” কাউন্সিলর দুর্গা রাও বলেন, “আমরা গরিব মানুষের পাশে আছি বলেই শিশুটিকে ফেরানোর ব্যবস্থা করতে পেরেছি। ঈশাকে ফিরে পেয়ে আমরা সত্যিই খুশি।”