বালি তুলতে গিয়ে ইতিহাসের পাতা খুলে গেল বাঁকুড়ার ওন্দা ব্লকের ওলা দুবরাজপুরে (Darkeshwar)। শনিবার বিকেলে দারকেশ্বর নদী থেকে বালি তোলার সময় শ্রমিকদের চোখে পড়ে একটি প্রাচীন পাথরের মূর্তি। মুহূর্তেই খবর ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। স্থানীয়রা মূর্তিটিকে নিয়ে যান কাছাকাছি একটি মন্দিরে। এরপর শুরু হয় জল্পনা—এই মূর্তি কীভাবে নদীর তলদেশে এল, কী তার ইতিহাস (Darkeshwar)?
গবেষকদের দাবি, বাদামী বেলেপাথরের তৈরি মূর্তিটি একটি দ্বাদশভূজ লোকেশ্বর বিষ্ণুমূর্তি (Darkeshwar)। মূর্তিটি প্রায় ৩ ফুট ৯ ইঞ্চি উঁচু এবং ২ ফুট চওড়া। মূর্তির কেন্দ্রে রয়েছে বারোটি হাতসহ বিষ্ণুর প্রতিকৃতি। বিষ্ণুর দু’পাশে রয়েছে আয়ুধ পুরুষ এবং শ্রীদেবী ও ভূদেবীর মূর্তি। প্রতিটি অংশ সূক্ষ্ম ও নিখুঁতভাবে খোদাই করা। কীরিট, কর্ণকুন্তল, বরমালা, যজ্ঞোপবিত—সব কিছুই অক্ষত। ফলে প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, এটি শুধু শিল্পের নিদর্শন নয়, বরং এক ঐতিহাসিক ধন।
প্রত্নতত্ত্ববিদ সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রাথমিক অনুমান, এই মূর্তিটি একাদশ বা দ্বাদশ শতাব্দীতে নির্মিত। স্থানীয়রা দাবি করেছেন, বহু বছর আগে দারকেশ্বর নদীর তীরে একটি প্রাচীন বিষ্ণু মন্দির ছিল। এলাকাটির নামও হয়েছে সেই মন্দিরের নাম অনুসারে—মন্দিরতলা। পরবর্তীকালে নদীর ভাঙনে মন্দিরটি তলিয়ে গেলে হারিয়ে যায় মূর্তিটিও। ধারণা করা হচ্ছে, এবার সেই মূর্তিই উদ্ধার হয়েছে।
প্রাচীন সভ্যতার আঁচর এখনও বাঁকুড়ার মাটি জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে। কংসাবতী ও দারকেশ্বর নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল একসময়ের সমৃদ্ধ জৈন সভ্যতা, যা পরে হিন্দু সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে যায়। আজও সেই চিহ্ন দেখা যায় নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায়। মাঝেমধ্যে উদ্ধার হয় জৈন তীর্থঙ্করদের দীগম্বর মূর্তিও। তবে এই বিষ্ণু মূর্তির আবিষ্কার এক ব্যতিক্রমী ঘটনা।
মূর্তিটি উদ্ধারের পর থেকেই এলাকায় ভিড় জমাচ্ছেন বহু মানুষ। কেউ বলছেন এটি অলৌকিক, কেউবা বলছেন এটা ভাগ্যের বিষয়। প্রশাসনের তরফেও বিষয়টি খতিয়ে দেখার প্রস্তুতি চলছে।