যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্কের (Elon Musk) সম্পর্ক যেন একটা নাটকীয় সিনেমা — শুরু হয়েছিল দ্রুত, গভীর আর উন্মুক্তভাবে। আর শেষটাও হচ্ছে ঠিক তেমনি।
একসময় ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও হোয়াইট হাউসের ঘরোয়া মানুষ ইলন মাস্ক (Elon Musk), এখন তারই বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আছেন। দুই প্রভাবশালী ব্যক্তির এই দ্বন্দ্ব এখন আমেরিকার রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে। সম্প্রতি ইলন মাস্ক X-হ্যান্ডেলে (পূর্বের টুইটার) একটি জরিপ পোস্ট করেন। সেখানে তিনি (Elon Musk) লেখেন, “এখন কি সময় হয়েছে আমেরিকায় এমন একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের, যারা প্রকৃতপক্ষে মাঝখানের ৮০ শতাংশ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করবে?” এই পোস্টটিকে অনেকে দেখছেন মাস্কের (Elon Musk) নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ইঙ্গিত হিসেবে। ট্রাম্পের “One Big Beautiful Bill”–কে নিয়ে মাস্ক প্রকাশ্যে কড়া সমালোচনা করেন এবং বলেন, “আমার না থাকলে ট্রাম্প নির্বাচনে হারতেন।” আরও বলেন, “এত অবজ্ঞা, এত অকৃতজ্ঞতা!” এই মন্তব্য ট্রাম্পকে ভীষণ ক্ষিপ্ত করে তোলে। তিনি Truth Social-এ জবাব দেন, “ইলনের কোম্পানিগুলোর সরকারি চুক্তি ও ভর্তুকি বাতিল করলেই বাজেটে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বাঁচানো যাবে। আমি তো সবসময় অবাক হতাম, বাইডেন এটা করেনি কেন!”
এরপর হোয়াইট হাউসের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ট্রাম্প বলেন, “আমি সৎভাবে বলছি, মনে হয় ইলন (Elon Musk) ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য এখন আফসোস করছে।” ট্রাম্প বলেন, তিনি ইলনের প্রতি “ভীষণ হতাশ”। অথচ কিছুদিন আগেও, এই দু’জনের সম্পর্ক ছিল যেন ‘মেড ইন হেভেন’। ট্রাম্প যখন পেনসিলভানিয়ায় একটি প্রচারণা সমাবেশে অল্পের জন্য হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে যান, তখন ইলন মাস্ক প্রথম সারির সমর্থক হয়ে সামনে আসেন (Elon Musk)। তিনি তখন বিশেষ একটি রাজনৈতিক তহবিল গঠন করেন, যা ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচন প্রচারে সহায়তা করে।
মাস্ক তখন ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, মন্ত্রিসভা বৈঠকেও অংশ নেন এবং বহুবার Air Force One-এ ট্রাম্পের সাথে ভ্রমণ করেছেন। এমনকি MAGA (Make America Great Again) টুপি পরে ছবিও তুলেছেন।
কিন্তু সেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এখন এক তিক্ত যুদ্ধের রূপ নিয়েছে। ওভাল অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে ইলন মাস্ক নিজেই আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাম্পের সঙ্গ ত্যাগ করেন। মুখে একটি কালো চোখ (black eye) নিয়ে হাজির হন, যার ব্যাখ্যায় বলেন, “এটা আমার ছোট ছেলের দুষ্টুমির ফল।” তবে অনেকে মনে করছেন, এটা যেন তার সরকারের সঙ্গে ‘অশুভ সম্পর্কের’ একটি প্রতীক।
এই ভাঙন শুধু ব্যক্তিগত নয়, এটি প্রযুক্তি, রাজনীতি এবং অর্থনীতির ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলেই মত বিশ্লেষকদের।
