ফের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ (RG Kar)। চিকিৎসকের রহস্যজনক মৃত্যু ঘিরে রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে চিকিৎসক মহলে। মৃত চিকিৎসকের (RG Kar) নাম সাগ্নিক মুখোপাধ্যায় (Sagnik Mukherjee)। রবিবার গভীর রাতে বারাসতের এক বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে মৃতদেহ। প্রাথমিকভাবে মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা থাকলেও, অনুমান করা হচ্ছে ওষুধের অতিমাত্রায় শরীরে বিষক্রিয়া তৈরি হয়।
বসিরহাটের বড় কালিবাড়ি পাড়ার শিশিরকুঞ্জ আবাসনের বাসিন্দা ছিলেন সাগ্নিক (RG Kar)। তিনি আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরিবারের দাবি, হাসপাতালের অস্বাভাবিক কাজের চাপ এবং মানসিক ক্লান্তিই ধীরে ধীরে গ্রাস করছিল তাঁকে। মৃত চিকিৎসকের স্ত্রী ঐন্দ্রিলা রায়, যিনি নিজেও বসিরহাট জেলা হাসপাতালে চিকিৎসক, জানিয়েছেন— “গত কয়েক মাস ধরে সাগ্নিকের ওপর প্রবল কাজের (RG Kar) চাপ ছিল। প্রায় দিনরাত হাসপাতালে কাটাতেন। মানসিকভাবে ভীষণ চাপের মধ্যে ছিলেন।”
ঐন্দ্রিলার কথায়, “রবিবার রাত পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। খাওয়া-দাওয়া সারার পর আচমকা সাগ্নিক অসুস্থ বোধ করতে শুরু করেন। রাত ১২টার দিকে নিজেই বলেন, হাসপাতালে নিয়ে যেতে। আমরা দ্রুত ওঁকে বারাসতের হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু ১২টা ৩৭ মিনিটে চিকিৎসকরা জানান, আর কিছুই করার নেই— সাগ্নিক আর নেই।”
হাসপাতাল (RG Kar) সূত্রে খবর, সাগ্নিক নিয়মিত হার্ট রেট নিয়ন্ত্রণের ওষুধ খেতেন। প্রাথমিক অনুমান, একসঙ্গে একাধিক ট্যাবলেট খাওয়ার কারণে শরীরে বিষক্রিয়া হয়, আর তাতেই ঘটে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু। যদিও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পরই চূড়ান্ত কারণ জানা যাবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “মৃত্যুর বিষয়টি আমরা খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। এটি আত্মহত্যা নাকি দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু, সেটি জানতে সমস্ত প্রমাণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মৃত চিকিৎসক (RG Kar) মানসিক চাপে ছিলেন কি না, সেটিও তদন্তের আওতায়।”
অন্যদিকে, পরিবারের দাবি— সাগ্নিক এমন কিছু করতে পারেন, এটা তাঁরা বিশ্বাস করতে পারছেন না। মৃত চিকিৎসকের এক আত্মীয়ের কথায়, “ওর জীবনে কোনও জটিলতা ছিল না। সংসার ভালোই চলছিল। কাজের চাপ থাকলেও, সাগ্নিক সবসময় হাসিখুশি ছিল। আমরা বিষক্রিয়ায় মৃত্যুর কথা মানতে পারছি না।”
সাগ্নিকের বাবা শ্যামল কুমার মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “ছেলে আর বউমা একসঙ্গেই থাকত। কোনও পারিবারিক অশান্তি ছিল না। ঠিক কী ঘটেছে, সেটা বুঝে উঠতে পারছি না।”
ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই ফের প্রশ্ন উঠছে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের কর্মপরিবেশ নিয়ে। ঠিক এক বছর আগেও এই একই হাসপাতালই আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছিল, তরুণী চিকিৎসক খুন ও ধর্ষণ-কাণ্ডে। সেই ঘটনায় তোলপাড় হয়েছিল গোটা দেশ। একাধিক দুর্নীতি, প্রশাসনিক ব্যর্থতা, বেনিয়মের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন হাসপাতালের তৎকালীন প্রিন্সিপ্যাল সন্দীপ ঘোষও।
সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের এক চিকিৎসকের মৃত্যু ঘিরে নতুন করে তোলপাড় রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরে। চিকিৎসক মহলের প্রশ্ন— মানসিক চাপ আর অস্বাস্থ্যকর কাজের পরিবেশ কি আরজি কর মেডিক্যালে আরও এক প্রাণ কেড়ে নিল?
বর্তমানে ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষায় বসে আছে পুলিশ ও মৃতের পরিবার। এই রহস্যঘেরা মৃত্যু কি আত্মহত্যা, নাকি চিকিৎসার জগতে আরেক অজানা ট্র্যাজেডি— উত্তর দেবে সময়ই।







