পরেশ পাল জামিন মামলায় সিবিআই (CBI)-এর ভূমিকা ঘিরে উঠেছে একের পর এক প্রশ্ন। আদালতের সামনে দাঁড়িয়ে কার্যত অস্বস্তিতে পড়ে যায় তদন্তকারী সংস্থা। বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত স্পষ্ট ভাষায় জানতে চান—পরেশ পাল তাঁর ভাষণে কী বলেছিলেন? সেই বক্তব্য কি সিবিআই (CBI) তাদের অতিরিক্ত চার্জশিটে পেশ করেছে? যদি না করে থাকে, তাহলে কেন করেনি? পাশাপাশি সিবিআই (CBI) আদালতকে জানায়, তাদের হাতে নাকি মামলার সঙ্গে যুক্ত কিছু ভিডিও এসেছে। সেই ভিডিও সংক্রান্ত তথ্য জানার পরই বিচারপতির স্পষ্ট প্রশ্ন—ভিডিওগুলোয় কারা রয়েছে? পরেশ পাল, স্বপন সমাদ্দার বা পাপিয়া ঘোষ কি সেই ফুটেজে রয়েছেন? না থাকলে কী আছে সেখানে?
এতেই থামেননি বিচারপতি। সিবিআই (CBI) তদন্তে সিডিআর তথা কল রেকর্ড সংক্রান্ত তথ্য আদৌ যাচাই করেছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। অন্য অভিযুক্তদের সঙ্গে পরেশ পালদের ফোনালাপের কোনও প্রমাণ রয়েছে কি না, তা জানতে চাওয়া হয়। এরপর বিচারপতির ক্ষোভ প্রকাশ, যদি এমন গাফিলতি থেকে থাকে, তাহলে তো সংশ্লিষ্ট সিবিআই অফিসারের বিরুদ্ধেই তদন্ত হওয়া উচিত! কেন তিনি দায়িত্ব নিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখলেন না, তা নিয়ে কড়া সুরে প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত।
আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ—ভিডিও ফুটেজ ও সিডিআর সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে জমা দিতে হবে সিবিআইকে। উল্লেখ্য, বেলেঘাটার দীর্ঘদিনের বিধায়ক ও তৃণমূল নেতা পরেশ পালের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁর মদতেই ২০২১ সালের ভোট-পরবর্তী হিংসার সময় অভিজিৎ সরকারকে খুন করা হয়। অভিজিতের পরিবার দীর্ঘদিন ধরে সেই অভিযোগ তুলে আসছে। কিছুদিন আগেই সিবিআই চার্জশিটে পরেশ পালের নাম জুড়েছে, সঙ্গে রয়েছে তৃণমূল কাউন্সিলর স্বপন সমাদ্দার ও পাপিয়া ঘোষের নামও।
এদিকে, মামলার পাশাপাশি আদালতের সামনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তোলা হয়। অভিজিৎ সরকারের দাদা বিশ্বজিৎ সরকার অভিযোগ করেন, তাঁর উপর হামলা চালানো হয়েছে এবং তাতে জড়িত স্বপন সমাদ্দার ও পাপিয়া ঘোষ। পাল্টা বিশ্বজিৎ সরকারের বিরুদ্ধেই মানহানি ও ষড়যন্ত্রের মামলা দায়ের করেছেন কলকাতা পুরসভার মেয়র-ইন-কাউন্সিল সদস্য স্বপন সমাদ্দার। বিশ্বজিৎ সরকারের আইনজীবী আদালতের সামনে সেই মামলার কথাও তুলে ধরেন।
এই মামলার জল কতদূর গড়াবে, এখন সেদিকেই নজর গোটা রাজ্যের।