আগামী ৯ অগাস্ট অভয়াকাণ্ডের এক বছর পূর্ণ হতে চলেছে। সেই ভয়াবহ রাতে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে তরুণী চিকিৎসক অভয়ার ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা এখনও তাজা রয়েছে মহানগরবাসীর স্মৃতিতে। শহর জুড়ে যে প্রতিবাদ, ক্ষোভ, আর চোখের জল গড়িয়েছিল, তার আঁচ এখনও মুছে যায়নি। সেই ঘটনার মূল অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এখনও অধরা—এমনটাই মনে করেন অভয়ার শোকস্তব্ধ মা-বাবা (Kasba Case)।
এই আবহেই ফের চাঞ্চল্য শহর কলকাতায় (Kasba Case)। এবার অভিযোগের আঙুল উঠল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্দরেই গণধর্ষণের ঘটনায় (Kasba Case)। কসবার সাউথ ক্যালকাটা ল’ কলেজে এক আইন পড়ুয়াকে গণধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে কলেজেরই প্রাক্তন ছাত্র ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (TMCP) নেতা মনোজিৎ মিশ্র-কে(Kasba Case)। অভিযুক্ত মনোজিৎ কলেজের অস্থায়ী কর্মীও ছিলেন বলে জানা গেছে। তার সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছে আরও দু’জনকে।
অভিযোগকারিণী ছাত্রী জানান, বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতেই তাকে ভয়াবহ যৌন হেনস্তার শিকার হতে হয়। যিনি এই বর্বর ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত, সেই মনোজিৎ মিশ্রই কিনা গত বছর অভয়াকাণ্ডের পরে ফেসবুকে বিচারের দাবিতে গলা তুলেছিলেন! তার প্রোফাইলে সেই সময় পোস্ট করা হয়েছিল— “ধর্ষকের ফাঁসি চাই, নাটক নয়, বিচার চাই”। অথচ এক বছরের মাথায় তাঁরই নাম উঠল আরেক ধর্ষণের ঘটনায়!
এই ঘটনা সামনে আসতেই প্রশ্ন উঠেছে— নিজে ফাঁসির দাবি করা মনোজিৎ আজ কীভাবে ধর্ষণে অভিযুক্ত? এই কি শুধুই নৈতিক অধঃপতন, না কি এর পেছনে রয়েছে ক্ষমতার অদৃশ্য ছায়া?

মনোজিতের অতীতও একেবারে পরিচ্ছন্ন নয়। ২০১৭ সালেই কসবা থানায় তার বিরুদ্ধে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছিল। তখনও সে ছিল কলেজের TMCP ইউনিটের সক্রিয় মুখ। এমনকি পুলিশের খাতায় তখনও ছিল তার নাম। যদিও পরে তাকে অস্থায়ী কর্মী হিসেবে নিয়োগ করা হয় সাউথ ক্যালকাটা ল’ কলেজেই—কলেজ পরিচালন সমিতির সুপারিশে। পাশাপাশি জানা গেছে, আলিপুর কোর্টে আইনজীবী হিসেবেও প্র্যাকটিস করতেন মনোজিৎ। অর্থাৎ কলেজের ভেতর-বাইরের পরিসরে ছিল তার অদৃশ্য দাপট।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে মনোজিতের একাধিক প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে তোলা ছবি। সেই তালিকায় আছেন মন্ত্রী, বিধায়ক, এমনকি ছাত্র সংগঠনের রাজ্য সভাপতি পর্যন্ত! তাই প্রশ্ন উঠছে—এই দুঃসাহস কি শুধুই রাজনৈতিক মদতের ফল? অভিযুক্তের মাথার উপর কি রয়ে গেছে কোনও অদৃশ্য, অথচ অত্যন্ত প্রভাবশালী হাত?
কসবার এই ঘটনা যেন আর এক ‘অভয়াকাণ্ড’। শহর আজও সেই যন্ত্রণার বাইরে আসতে পারেনি। আর তার মধ্যেই ফের এক ছাত্রীর ওপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভিতরেই গণধর্ষণের অভিযোগ, তাও এমন এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে, যিনি নিজে বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন! শহরের বুকে কি তবে এবারও পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলেছে বিচারহীনতার?