‘অপরাজিতা বিল’ (Aprajita Bill) রাজ্য সরকারের কাছে ফেরত পাঠালেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। গত বছর বিধানসভায় পাশ হওয়া এই বিল প্রথমে পাঠানো হয় রাজভবনে এবং সেখান থেকে তা যায় রাষ্ট্রপতির দফতরে। এক বছর পর সেই বিল আবার ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারের কাছে। রাজভবনের তরফে জানানো হয়েছে, বিলটিতে একাধিক সংবিধানবিরোধী এবং সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরিপন্থী প্রস্তাব রয়েছে, যার কারণে সেটি গৃহীত হয়নি (Aprajita Bill)।
রাজভবনের দাবি, সাধারণ নিয়মে রাজ্যের অন্যান্য বিলগুলিতে সংবিধান অনুযায়ী রাজ্যপাল সই করে থাকেন। তবে ‘অপরাজিতা বিল’ (Aprajita Bill) স্পর্শকাতর বিষয় সংক্রান্ত হওয়ায় সেটি পাঠানো হয় রাষ্ট্রপতির কাছে। সেখান থেকেই বলা হয়েছে, ‘কিছু সাংবিধানিক উদ্বেগের’ কারণে বিলটি ফেরানো হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের আগস্ট মাসে এক তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পর তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয় রাজ্যে। সেই ঘটনার প্রতিক্রিয়াতেই বিধানসভায় পাশ হয় ‘অপরাজিতা বিল’ (Aprajita Bill)। বিলটিতে ধর্ষণের শাস্তিকে আরও কঠোর করার কথা বলা হয়, যা বর্তমান কেন্দ্রীয় আইনের তুলনায় বেশি কড়া।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, ২০২৩-এর ৬৪ নম্বর ধারা সংশোধন করে ধর্ষণের শাস্তি ১০ বছরের বদলে সরাসরি যাবজ্জীবন (আজীবনের জন্য) অথবা মৃত্যুদণ্ড করার প্রস্তাব ছিল (Aprajita Bill)। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মতে, এই সংশোধনী ‘অতিরিক্ত কঠোর’ এবং ‘আইনি অসামঞ্জস্যপূর্ণ’। একই সঙ্গে, ৬৫ নম্বর ধারা বাতিল করে ১২ বছরের নিচে এবং ১৬ বছরের নিচের ধর্ষণের শাস্তির মধ্যে পার্থক্য তুলে দেওয়ার প্রস্তাবকেও প্রশ্নের মুখে ফেলে কেন্দ্র। আরও বিতর্ক তৈরি হয়েছে বিলের ৬৬ নম্বর ধারা নিয়ে, যেখানে ধর্ষণের ফলে নির্যাতিতার মৃত্যু হলে বিচারকের কোনও বিবেচনাধিকার ছাড়াই বাধ্যতামূলকভাবে মৃত্যুদণ্ডের কথা বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, এটি বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতার পরিপন্থী।
এই অবস্থায় ‘অপরাজিতা বিল’ ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত ঘিরে ফের তীব্র রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে রাজ্যে। তৃণমূল কংগ্রেস মুখপাত্র কুণাল ঘোষ এই বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি ক্ষোভের সুরে লিখেছেন, “ধর্ষণ-খুনে মৃত্যুদণ্ডকে যদি কেউ অতিরিক্ত নিষ্ঠুর সাজা বলে মনে করে, তাহলে সেটা মেনে নেওয়া যায় না। এটা সত্যি হলে তীব্র প্রতিবাদ রইল।”
তৃণমূলের দাবি, ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর আইন করা প্রয়োজন, আর ‘অপরাজিতা বিল’ তারই একটা পদক্ষেপ। কিন্তু সেই উদ্যোগকে কেন্দ্র এবং রাজভবন যে যুক্তিতে আটকে দিয়েছে, তা রাজ্যের জনগণের আবেগকেই অপমান করছে বলে অভিযোগ শাসকদলের।