পাকিস্তানের সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারত সিন্ধু নদীর পশ্চিমাঞ্চলের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করায় (Indus Water treaty) দেশটিতে জলপ্রবাহের পরিমাণে বড় রকমের পতন ঘটেছে। সিন্ধু অববাহিকায় পাকিস্তানের বিভিন্ন বাঁধ থেকে যে পরিমাণ জল ছাড়া হচ্ছে, তা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১৫ শতাংশ কমে গেছে।
চলতি বছরের ৫ জুন, পাকিস্তানের পাঞ্জাবে বিভিন্ন ড্যাম থেকে জল ছাড়া হয়েছে ১.২৪ লাখ কিউসেক, যেখানে আগের বছর এই সময়ে তা ছিল ১.৪৪ লাখ কিউসেক। খাইবার পাখতুনখোয়ার তারবেলা ড্যামে পানির উচ্চতা নেমে এসেছে ১,৪৬৫ মিটার পর্যন্ত, যেখানে ডেড লেভেল ১,৪০২ মিটার। (Indus Water treaty) পাঞ্জাবের চাশমা ড্যামে জলের উচ্চতা ৬৪৪ মিটার, যা ডেড লেভেল ৬৩৮ মিটারের খুব কাছাকাছি। মিরপুরের মঙ্গলায় জেলাম নদীর ওপর ড্যামের জল আছে ১,১৬৩ মিটারে, যেখানে ডেড লেভেল ১,০৫০ মিটার।
ডেড লেভেল (Indus Water treaty) মানে এই যে, ওই স্তরের নিচে কোনো প্রাকৃতিক প্রবাহের মাধ্যমে জল ছাড়া সম্ভব নয়।
একজন শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা CNN-News18 কে জানান, “পাকিস্তানে পরিস্থিতি অত্যন্ত সংকটজনক, বিশেষ করে জুন থেকে সেপ্টেম্বরের দেরি খরিফ মৌসুমের জন্য।” পরিস্থিতি বর্ষার আগমনের পর কিছুটা উন্নতি হতে পারে, তবে পাঞ্জাব অঞ্চলের খরিফ ফসল বিপদের মুখে পড়েছে।
জুন ১০ পর্যন্ত চলা খরিফ মৌসুমের প্রাথমিক পর্যায়ে ভারতের পদক্ষেপের ফলে পাকিস্তান প্রায় ২১ শতাংশ জলের ঘাটতির মুখে পড়েছে। পাকিস্তানের সিয়ালকোটের মারালায় চেনাব নদীর গড় প্রবাহ ২৮ মে ছিল ২৬,৬৪৫ কিউসেক, যা ৫ জুনে এসে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩,০৬৪ কিউসেক।

এই সংকটের মধ্যে পাকিস্তানে ৮ জুন থেকে তীব্র দাবদাহের পূর্বাভাসও দেওয়া হয়েছে। পাঞ্জাব, ইসলামাবাদ, খাইবার পাখতুনখোয়া, কাশ্মীর ও গিলগিট-বালতিস্তানে দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি হতে পারে।
গত মাসে পাকিস্তান সরকার এক বিবৃতিতে জানায়, চেনাব নদীতে ভারতের পানি সরবরাহ বন্ধের ফলে তারা বড় ধরনের সঙ্কটে পড়েছে। পাকিস্তান এই পদক্ষেপকে “যুদ্ধ ঘোষণা” বলে উল্লেখ করেছে এবং বলেছে, পরবর্তী যুদ্ধ হতে পারে পানি নিয়ে।
পাকিস্তান এখন পর্যন্ত ভারতের কাছে চারটি চিঠি পাঠিয়েছে সিন্ধু জলচুক্তি পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়ে। কিন্তু ভারত জানিয়ে দিয়েছে, এই চুক্তি আপাতত স্থগিত থাকবে এবং “জল ও রক্ত একসাথে প্রবাহিত হতে পারে না”।
গত ২৭ মে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, “ভারতের জনগণের তাদের প্রাপ্য পানি পাওয়ার অধিকার আছে। আমি তো এখনও তেমন কিছু করিইনি। শুধু চুক্তি স্থগিত করেছি, আর ড্যামের কিছু গেট খুলে সাফাই শুরু করেছি। তাতেই ওদের ভয়ে কাঁপুনি ধরে গেছে।”