ভারতীয় সেনাবাহিনীর (Delhi High Court) এক কমান্ডিং অফিসার, স্যামুয়েল কামালেসনকে ধর্মীয় কারণে নিয়মিত রেজিমেন্টের সাপ্তাহিক উপাসনা মিছিল (রিলিজিয়াস প্যারেড)-এ অংশ না নেওয়ায় বরখাস্ত করা হয়েছিল। সেই বরখাস্তের সিদ্ধান্তকে বৈধ বলেই মেনে নিল দিল্লি হাইকোর্ট (Delhi High Court) ।
স্যামুয়েল কামালেসন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। তাঁর দাবি, তিনি তাঁর জওয়ানদের সঙ্গে মন্দির ও গুরুদ্বারায় নিয়মিত যেতেন, কিন্তু শুধু মন্দিরের অভ্যন্তরীণ অংশে প্রবেশ করতে আপত্তি জানাতেন, যেটি তাঁর বিশ্বাসের বিরোধী। তিনি বলেছিলেন, তাঁর মনোথিস্টিক (একেশ্বরবাদী) বিশ্বাস ও সৈনিকদের ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেন (Delhi High Court) ।
তাঁর মতে, রেজিমেন্টে শুধুই মন্দির ও গুরুদ্বারার সুবিধা ছিল, কোনও “সর্বধর্ম স্থান” (Sarv Dharm Sthal) ছিল না, যেখানে সব ধর্মের সেনারা একত্রে উপাসনা করতে পারতেন।
তবে সেনা কর্তৃপক্ষ জানান, স্যামুয়েল একাধিকবার নির্দেশ লঙ্ঘন করেছেন এবং রেজিমেন্টাল ধর্মীয় কার্যক্রমে ইচ্ছাকৃতভাবে অংশ নেননি। বিষয়টি নিয়ে তাঁকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করা হলেও কোনও পরিবর্তন আসেনি। তাঁর এই আচরণ সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা ও ঐক্যের পরিপন্থী বলেই মনে করেছে সেনা সদর দফতর।
হাইকোর্ট জানায়, সেনাবাহিনীর মূলনীতি হল “দেশ আগে, তারপর ধর্ম ও ব্যক্তি”। সেনাবাহিনীতে একতা আসে ইউনিফর্ম থেকে—ধর্ম, জাতি বা ভাষা দিয়ে নয়। একজন কমান্ডিং অফিসার হিসেবে তাঁর দায়িত্ব ছিল সব ধর্মের সেনাদের অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে রেজিমেন্টের ঐক্য বজায় রাখা।
স্যামুয়েল ২০১৭ সালের মার্চে লেফটেন্যান্ট পদে কমিশন পান এবং ৩য় ক্যাভালরি রেজিমেন্টে নিযুক্ত হন। তাঁর ইউনিটে মূলত শিখ, জাট ও রাজপুত সেনা থাকতেন। অভিযোগ, স্যামুয়েল দীর্ঘদিন ধরে রেজিমেন্টাল ধর্মীয় পরিক্রমায় অংশ নেননি এবং এতে সৈনিকদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ে।
আদালত জানায়, সেনাবাহিনীর ধর্মনিরপেক্ষ নীতি বজায় রাখতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সামরিক নেতৃত্বের সিদ্ধান্তে আদালত হস্তক্ষেপ করতে চায় না, কারণ এটি সেনার কার্যকারিতা ও মনোবলের সঙ্গে জড়িত।
কোর্টের মতে, বিষয়টি সেনার ভিতরের ধর্মীয় সংবেদনশীলতার সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় আদালতে সামরিক বিচার (court-martial) না করেই ব্যবস্থা নেওয়াকে যৌক্তিক বলেই মনে করা হয়েছে। তাই কামালেসনের চাকরিচ্যুতি ও পেনশন/গ্র্যাচুইটি না পাওয়ার সিদ্ধান্তকে বৈধ ঘোষণা করে আদালত।