ঝড়–বৃষ্টির সুযোগ নিয়ে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন তিনি। ভেবেছিলেন, গোপনে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকে পড়বেন (Bangladesh)। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ভারতের বসিরহাটের হাকিমপুর সীমান্ত চেকপোস্টে বিএসএফের হাতে ধরা পড়লেন বাংলাদেশ পুলিশের প্রাক্তন শীর্ষ কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান আরিফ (Bangladesh)।
শনিবার (২৩ আগস্ট) সন্ধ্যায় সাতক্ষীরার কাকডাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢোকার চেষ্টা করছিলেন তিনি (Bangladesh)। সীমান্তে বিএসএফের নজরে আসতেই তাঁকে আটক করা হয়। পরে পরিচয়পত্র দেখে জানা যায়, তিনি বাংলাদেশের পুলিশ সার্ভিসেরই একজন কর্মকর্তা। বর্তমানে তাঁকে উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগর থানায় রাখা হয়েছে। বিষয়টি বাংলাদেশ হাইকমিশনকেও জানানো হয়েছে (Bangladesh)।
তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগের তালিকা, তা রীতিমতো চাঞ্চল্যকর। আরিফুজ্জামান ছিলেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক কমিশনার। পরে তাঁকে বদলি করে ময়মনসিংহে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। এর মধ্যেই তাঁর বিরুদ্ধে জমা হয় একের পর এক ভয়ঙ্কর মামলা (Bangladesh)।
বাংলাদেশ পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের জুলাই আন্দোলনে ৩টি হত্যা মামলা ও ২টি হত্যাচেষ্টা মামলার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন তিনি। শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তিনি চার্জশিটভুক্ত আসামি। তাজহাট থানায় একই মামলার ৪ নম্বর আসামি হিসেবেও নাম আছে তাঁর (Bangladesh)।
শুধু তাই নয়, রংপুর কোতোয়ালি থানায় কলা ব্যবসায়ী শহীদ মেরাজুল ইসলাম হত্যা মামলার ২১ নম্বর আসামি, সবজি ব্যবসায়ী শহীদ সাজ্জাদ হোসেন হত্যা মামলার ১৬ নম্বর আসামি তিনি। কলেজ ছাত্র জিম হত্যাচেষ্টা মামলায় ৫ নম্বর আসামি আর পল্লী চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলম সিদ্দিকী হত্যাচেষ্টা মামলায় ২ নম্বর আসামি হিসেবে অভিযুক্ত আরিফুজ্জামান।
সাক্ষীদের ভয় দেখানো, প্রমাণ লোপাট করা—এসব অভিযোগও আছে তাঁর বিরুদ্ধে। প্রত্যক্ষদর্শীর কাছ থেকে কৌশলে হলফনামা করিয়ে নিজের নামও একবার মামলার তালিকা থেকে কেটে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ।
রংপুরের সাবেক পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলী জানিয়েছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সবচেয়ে আগ্রাসী ভূমিকা নিয়েছিলেন আরিফুজ্জামান। ২০২৩ সালের ১৬ জুলাই রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে যাচ্ছিল ছাত্রদের মিছিল। ক্যাপ্টেন ব্যাকোলজি মোড়ে পুলিশ মিছিল আটকে দেয়। নেতৃত্বে ছিলেন এসি আরিফুজ্জামান। তখনই তিনি বেধড়ক লাঠিচার্জের নির্দেশ দেন। এমনকি শহীদ আবু সাঈদকে গুলি করার আগে-পরে সরাসরি নির্দেশ দেন এবং নিজেও গুলি চালান বলে অভিযোগ।
এত গুরুতর অভিযোগ সত্ত্বেও এতদিন তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। শেষমেশ সীমান্ত পার হয়ে ভারতে পালাতে গিয়ে ধরা পড়লেন।
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তাঁকে আগেই সাময়িক বরখাস্ত করেছিল। এখন প্রশ্ন হচ্ছে—তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে কি না। ভারতীয় পুলিশ জানিয়েছে, আগে দেখা হবে ভারতের আইনে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয় কি না। এরপরই সিদ্ধান্ত নেবে দুই দেশের বিদেশ মন্ত্রক।
বাংলাদেশ পুলিশ ইতিমধ্যেই তাঁর সব মামলার নথি ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে পাঠিয়েছে। এখন অপেক্ষা—একাধিক খুনের আসামি পুলিশ অফিসারকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার হবে, নাকি তিনি থেকে যাবেন আন্তর্জাতিক আইনের জটিলতায় আটক?