ভিনরাজ্যে বাংলা ভাষায় কথা বললেই চলছে নিপীড়ন, একের পর এক অভিযোগে ক্রমশ চাপে পড়ছে প্রশাসন (Migrant Workers)। বাংলাভাষী হলেই শুরু হচ্ছে হয়রানি, চলছে পরিচয়পত্র যাচাইয়ের নামে হেনস্থা, এমনকি পুলিশি মারধর ও ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে রাখার মতো গুরুতর অভিযোগ উঠছে। সম্প্রতি হরিয়ানার গুরগাঁও থেকে একঝাঁক এমন পরিযায়ী শ্রমিক চরম আতঙ্কে ফিরে এসেছেন নিজেদের জেলায় (Migrant Workers)।
সোমবার সন্ধ্যায় তিনটি ভাড়া করা বাসে প্রায় ২০০ জন পরিযায়ী শ্রমিক পাড়ি দেন দক্ষিণ দিনাজপুরের বংশীহারিতে (Migrant Workers)। শুধু নিজেরাই ফেরেননি, সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন ঘরবাড়ির আসবাবপত্রও। ফিরে আসা শ্রমিকদের মুখে আতঙ্ক ও ক্ষোভ স্পষ্ট। তাঁদের কথায়, ‘‘ভিনরাজ্যে কাজ করতে গিয়ে এখন নিজের ভাষা বলাটাই অপরাধ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলা বললেই পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যাচ্ছে (Migrant Workers)। পরিচয়পত্র দেখালেও রেহাই নেই—নানা অজুহাতে মারধর করা হচ্ছে, আটকে রাখা হচ্ছে ডিটেনশন ক্যাম্পে।”
দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া—এমন বহু জেলার মানুষ দিল্লি, হরিয়ানা ও গুরগাঁওয়ে নির্মাণ শ্রমিক, পরিচারিকা ও কারখানার কর্মী হিসেবে কাজ করেন (Migrant Workers)। তাঁদের মধ্যে গুরগাঁওয়ের বহু এলাকা দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাভাষী শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল। কিন্তু, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে বাঙালি শ্রমিকদের যেভাবে নিশানা করা হচ্ছে, তাতে ক্রমেই ভরসা হারাচ্ছেন পরিযায়ীরা।
শ্রমিকদের (Migrant Workers) একাংশের দাবি, গুরগাঁওয়ের নানা নির্মাণ সংস্থায় তাঁরা চুক্তিভিত্তিক কাজ করতেন। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তাঁদের উপর নজরদারি শুরু হয়। বাংলা শুনলেই পুলিশ ছুটে আসে, পরিচয়পত্র দেখতে চায়। কিন্তু পরিচয়পত্র দেখিয়েও রক্ষা মিলছে না। মারধর, জেরা, এমনকি ‘ডিটেনশন’—এই চক্রে পড়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বহু শ্রমিক।
আরও চাঞ্চল্যকর অভিযোগ, স্থানীয় পুলিশ তাঁদের জানিয়ে দিয়েছে, ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে যদি তাঁরা এলাকা না ছাড়েন, তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ভয় থেকেই সোমবার রাতের অন্ধকারে তিনটি বাস ভাড়া করে প্রায় ২০০ জন শ্রমিক পরিবার নিয়ে ফিরে আসেন দক্ষিণ দিনাজপুরের রাঙ্গাপুকুর এলাকায়।
এ বিষয়ে দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক বিজিন কৃষ্ণা বলেন, “জেলা প্রশাসন পুরো বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। স্থানীয় ব্লক প্রশাসনের মাধ্যমে শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে এবং তাঁদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে।”
এই ঘটনায় রাজ্য রাজনীতিতেও উত্তেজনা ছড়িয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস ইতিমধ্যেই প্রতিবাদে পথে নেমেছে। তাদের অভিযোগ, ভিনরাজ্যে বাঙালিদের সঙ্গে ভাষার ভিত্তিতে যেভাবে বৈষম্য করা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।