বিখ্যাত ভারতীয়-ব্রিটিশ লেখক সলমন রুশদি-র (Salman Rushdie) উপর ছুরিকাঘাত চালিয়ে তাঁকে এক চোখে স্থায়ীভাবে অন্ধ করে দেওয়া যুবক হাদি মাতার-কে ২৫ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করল মার্কিন আদালত। হামলার (Salman Rushdie) প্রায় এক বছর পর এবার ঘোষণা করা হলো এই বহুল প্রতীক্ষিত সাজা। একটি সভায় মঞ্চে উঠে হাদি মাতা তাঁকে (Salman Rushdie) ছুরিকাঘাত করে।
২০২২ সালের আগস্টে, নিউ ইয়র্কে একটি সাহিত্যসভায় বক্তৃতা দিতে উঠে মঞ্চে ছিলেন সলমন রুশদি। সেই সময়ই মুখোশধারী এক ব্যক্তি মঞ্চে উঠে ধারালো ছুরি দিয়ে লেখকের মাথা ও ঘাড়ে একাধিকবার আঘাত করে। ৭৭ বছর বয়সি রুশদি পরে জানান, “আমি ভেবেছিলাম আমি মারা যাচ্ছি। ছুরির একের পর এক আঘাতে আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়ি।” এই ঘটনায় তার এক চোখের দৃষ্টিশক্তি ও একটি হাতের কার্যক্ষমতা চিরতরে হারিয়ে গেছে।
২৭ বছর বয়সী হাদি মাতার, যিনি এলোপাথাড়ি হামলার অভিযোগে হত্যার চেষ্টা ও মারাত্মক হামলার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন, তিনি সাজা ঘোষণার আগে আদালতের সামনে বক্তব্য রাখেন। হাতকড়া ও কারাগারের পোশাক পরিহিত মাতার আদালতে বলেন,”সলমন রুশদি একজন ভণ্ড। বাকস্বাধীনতার নামে তিনি অন্যদের অপমান করেন, ধমক দেন। আমি তার এই মনোভাবের ঘোর বিরোধী।”
তবে, বিচারপতি তাঁর যুক্তি উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “বাকস্বাধীনতা মানে কারও সঙ্গে একমত না হলে তাকে হত্যা করার লাইসেন্স নয়।” সলমন রুশদি আদালতে উপস্থিত ছিলেন না, তবে তিনি ভিকটিম ইমপ্যাক্ট স্টেটমেন্ট জমা দেন, যেখানে তিনি বর্ণনা করেন কীভাবে এই হামলা তার জীবন চিরতরে বদলে দিয়েছে।
সলমন রুশদি বিশ্বজুড়ে বিতর্কের কেন্দ্রে এসেছিলেন ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত তাঁর উপন্যাস ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’-এর জন্য। ইসলাম ধর্ম নিয়ে অবমাননার অভিযোগ তুলে ইরানের তৎকালীন সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা খোমেনি রুশদির বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেছিলেন, যার জেরে তিনি দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকেন।
এই রায়কে কেন্দ্র করে বাকস্বাধীনতা বনাম ধর্মীয় অনুভূতির বিতর্ক আরও একবার সামনে এসেছে। অনেকেই বলছেন, এই ঘটনার রায় কেবল এক অপরাধীর সাজা নয়, বরং এটি এক চেতনাগত লড়াইয়ে বিচারব্যবস্থার অবস্থান স্পষ্ট করছে।