ফরিদাবাদের “হোয়াইট-কলার টেরর মডিউল” (White-Collar Module) কাণ্ডে গ্রেফতার ডাঃ শাহিনকে নিয়ে যত তথ্য সামনে আসছে, ততই রহস্য আরও গভীর হচ্ছে। জইশ-ই-মহম্মদের মহিলা শাখা ‘জামাত-উল-মোমিনাত’-এর ভারতীয় ইউনিটের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল তাঁর—এমনই সন্দেহ তদন্তকারী সংস্থার। কিন্তু তাঁর অতীত জীবন ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। যিনি এখন “র্যাডিক্যালাইজড” (White-Collar Module)বলে অভিযুক্ত, তাঁকে নিয়ে সাবেক স্বামী ডাঃ জাফর হায়াতের স্মৃতি একেবারেই আলাদা ছবি দেখাচ্ছে।
হায়াত জানিয়েছেন, শাহিন নিয়মিত ধর্মকর্ম পালন করতেন ঠিকই, কিন্তু কখনওই বোরকা পরে বাইরে যেতেন না। বাজারে হোক, হাসপাতাল হোক বা জনসমাগম—তিনি বোরকা পরা মেয়েদের সঙ্গে হাঁটতেও অস্বস্তি বোধ করতেন। শুধু হায়াতের পরিবারে যেতে হলে বোরকা পরতেন। এই তথ্য তিনি অপরাধ দমন শাখাকেও জানিয়েছেন (White-Collar Module)।
হায়াত জানাচ্ছেন, শাহিনের গ্রেফতারের (White-Collar Module) খবর তাঁকে শারীরিক–মানসিকভাবে এতটাই নাড়া দিয়েছে যে তিনি হাসপাতালে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। বুধবার–বৃহস্পতিবার দু’দিনই তিনি বাড়িতে শুয়ে কাটিয়েছেন। তাঁর কথায়, পরপর পুলিশ ও মিডিয়ার প্রশ্নের চাপে মাথা ঘুরে যাচ্ছে।
দু’জনের বিয়ে হয়েছিল একটি বৈবাহিক বিজ্ঞাপনের সূত্রে। তখন হায়াত ফতেহপুরে পোস্টেড ছিলেন, আর শাহিন ছিলেন প্রয়াগরাজে। পরে দু’জনে কানপুরে থিতু হন, জিএসভিএম মেডিক্যাল কলেজের কাছে তাঁদের বাসা, দু’টি সন্তানের জন্মও সেখানেই। হায়াত বলেন, শাহিন (White-Collar Module) ছিলেন অত্যন্ত সংরক্ষিত, উচ্চাকাঙ্ক্ষী। তিনি প্রায়ই বলতেন, “ভারতে কিছু নেই, আমায় বিদেশে যেতে হবে। আমেরিকা আর ব্রিটেনের জীবনটাই আসল।” তিনি নাকি নিজের সন্তানদেরও অন্য ডাক্তারদের বাচ্চাদের সঙ্গে খেলতে দিতেন না।
২০১৩ সালে আচমকাই তিনি শরিয়ত কোর্টে গিয়ে তালাক চেয়ে বসেন (White-Collar Module)। হায়াতের দাবি, এর আগে কখনওই তিনি বিচ্ছেদের ইঙ্গিত দেননি। বিচ্ছেদের পর আর কোনও যোগাযোগই রাখেননি। হায়াতও আর খোঁজ নেননি। তাঁর দুই সন্তান এখনও তাঁর সঙ্গেই আছে। তিনি জানান, “আমার বাচ্চারা আজও জানে না তাদের মা কোথায়। আমি বলতেও চাই না।”
তদন্তকারীরা এখন খতিয়ে দেখছেন, কানপুরে থাকার সময় থেকেই কীভাবে শাহিনের যোগাযোগ র্যাডিক্যাল গোষ্ঠীগুলির দিকে মোড় নিয়েছিল (White-Collar Module)। তাঁর ল্যাপটপে কী ধরনের অনলাইন সার্চ ছিল, কার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন, কেন ভাই পারভেজের সঙ্গে এত ঘন ঘন কথাবার্তা—এসবই খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে। হায়াত দাবি করেছেন, তিনি তাঁর স্ত্রীর ওই যোগাযোগ সম্পর্কে কিছুই জানতেন না।
এই তদন্তের মধ্যেই উঠে এসেছে আরও জটিল তথ্য—বিদেশি হ্যান্ডলার, মহিলাদের রিক্রুটমেন্টের সম্ভাব্য নির্দেশ, জইশের মহিলা শাখায় নেতৃস্থানীয় ভূমিকা, আর ব্যক্তিগত জীবনে একেবারে উল্টো এক চেহারা। ফলে ডাঃ শাহিনের অতীত ও বর্তমানের এই বৈপরীত্যই এখন তদন্তের প্রধান কৌতূহল।
তদন্ত সংস্থাগুলি বলছে, এখনও পর্যন্ত পাওয়া সূত্র স্পষ্ট করছে, শাহিনের র্যাডিক্যালাইজেশনের গল্প কোনও হঠাৎ পরিবর্তন নয়, বরং বছরের পর বছর ধরে গোপনে তৈরি হওয়া ছকের ফল। তবে কীভাবে একজন উচ্চশিক্ষিত ডাক্তার থেকে জঙ্গি সংগঠনের মহিলা উইং-এর সম্ভাব্য নেতৃত্বে উঠে এলেন—সেই প্রশ্নের উত্তরই এখন গোটা তদন্তের কেন্দ্রে।









