দিল্লির লালকেল্লার কাছে সোমবারের ভয়াবহ বিস্ফোরণের তদন্তে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে (Delhi Blast)। তদন্তকারী সংস্থার সূত্রে জানা গিয়েছে, নিহত আততায়ী চিকিৎসক ড. উমর নবি ৬ ডিসেম্বর, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের বার্ষিকী উপলক্ষে দিল্লিতে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণের ছক কষেছিলেন (Delhi Blast)। কিন্তু সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায় ফারিদাবাদে বিশাল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার হওয়ার পর। আতঙ্কে পড়ে গিয়ে তড়িঘড়ি গাড়ির ভিতরেই বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ফেলেন তিনি।
কাশ্মীরের পুলওয়ামার বাসিন্দা ২৮ বছর বয়সি ড. উমর নবি দক্ষিণ কাশ্মীরের এক হাসপাতালে কাজ করতেন (Delhi Blast)। তদন্তে জানা গিয়েছে, তিনি ২০২১ সালে সহকর্মী ড. মুজাম্মিল শাকিলের সঙ্গে তুরস্ক সফরে গিয়ে জইশ-ই-মহম্মদ (JeM)-এর ঘনিষ্ঠ কয়েকজন ওভারগ্রাউন্ড কর্মীর সংস্পর্শে আসেন। ফেরার পর থেকেই তার জীবনযাত্রায় চরম আদর্শগত পরিবর্তন আসে (Delhi Blast)। তিনি অনলাইনে বিস্ফোরক তৈরির উপায়, সার্কিট নকশা ইত্যাদি ডাউনলোড করে নিজের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে মজুত করতে থাকেন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, পটাশিয়াম নাইট্রেট ও সালফার।
তদন্তে জানা গিয়েছে, আল ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের আশেপাশে একাধিক জায়গায় বিস্ফোরক লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। পুলিশের দাবি, তিনি একটি ভেহিকল-বর্ন ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (VBIED) তৈরি করছিলেন— অর্থাৎ গাড়িবোমা। কিন্তু ১০ নভেম্বর ফারিদাবাদ পুলিশের হাতে ২,৯০০ কেজি বিস্ফোরক ধরা পড়ার পরই তাঁর পরিকল্পনা ভেস্তে যায় (Delhi Blast)। এর মধ্যে ৩৬০ কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মেলে ড. মুজাম্মিল শাকিলের ঘর থেকে।
তদন্তকারীরা বলছেন, সেই রাতেই ড. উমর আতঙ্কে পালিয়ে যান দিল্লির পুরনো শহরের একটি মসজিদে। কয়েক ঘণ্টা সেখানে লুকিয়ে থাকার পর তিনি তাঁর হুন্ডাই i20 গাড়ি নিয়ে বের হন। তাতেই ঘটে যায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ। তদন্তকারীরা বলছেন, গাড়িতে যে লোহার টুকরো বা শ্যর্পনেল বসানোর কথা ছিল, তা তখনও ইনস্টল করা হয়নি— ফলে অনেক বড় বিপর্যয় অল্পের জন্য এড়ানো গিয়েছে।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে সাতজন কাশ্মীরের— আরিফ নিসার দার ওরফে সাহিল, ইয়াসির-উল-আশরাফ, মকসুদ আহমদ দার ওরফে শাহিদ, মৌলভি ইরফান আহমদ, জমির আহমদ আহাঙ্গর, ড. মুজাম্মিল শাকিল এবং ড. আদিল। অষ্টম অভিযুক্ত ড. শাহিন সাঈদ উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ের বাসিন্দা।
তদন্ত সূত্রে জানা গিয়েছে, ড. উমর ২৬ অক্টোবর কাশ্মীরে গিয়েছিলেন। পরিবার ও বন্ধুদের জানিয়ে গিয়েছিলেন যে, তিনি আগামী তিন মাস যোগাযোগের বাইরে থাকবেন— যা এখন স্পষ্টতই ইঙ্গিত দেয়, তিনি বড়সড় অপারেশনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
এই গোটা সন্ত্রাস মডিউলের সূত্র মেলে ১৯ অক্টোবর, যখন শ্রীনগরের বিভিন্ন জায়গায় জইশ-ই-মহম্মদ সমর্থক পোস্টার দেখা যায়। সেই ঘটনার তদন্তেই ধরা পড়ে ড. মুজাম্মিল, যাঁর মাধ্যমে উন্মোচিত হয় এই ‘সাদা কলারের’ সন্ত্রাস চক্র— যার নেটওয়ার্ক কাশ্মীর থেকে ফারিদাবাদ হয়ে পৌঁছে গিয়েছিল রাজধানী দিল্লির অন্দরমহলে।
ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলির দাবি, এটি ছিল এক “ইন্টেলেকচুয়াল টেরর মডিউল”— যেখানে উচ্চশিক্ষিত তরুণ চিকিৎসক, অধ্যাপক এবং গবেষকরা JeM-এর হয়ে গোপনে কাজ করছিলেন।













