দিল্লি বিস্ফোরণকাণ্ডে এবার তদন্তের কেন্দ্রে উঠে এল ফরিদাবাদের ধাউজ গ্রামের একটি দোতলা বাড়ি (Delhi Blast)। এই বাড়িই এখন গোয়েন্দাদের কাছে “অপারেশন সেন্টার” বলে ধরা হচ্ছে। এখান থেকেই পরিকল্পনা করা হয়েছিল দিল্লির লালকেল্লা বিস্ফোরণ— যা ঘটার কথা ছিল আগামী ২৬ জানুয়ারি, প্রজাতন্ত্র দিবসে। কিন্তু গোয়েন্দাদের নজরে পড়ে যাওয়ায় তড়িঘড়ি করে গত ১০ নভেম্বরই সেই বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দেয় জঙ্গি মডিউলটি (Delhi Blast)।
ফরিদাবাদের এই ধাউজ গ্রামের বাড়িটি ভাড়া নিয়েছিল চিকিৎসক মুজাম্মিল আহমেদ গানাই (Delhi Blast)। বুধবার সকালে সেই বাড়িতে পৌঁছয় হরিয়ানা পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চ। এরপর আসেন আইবি-র শীর্ষ তদন্তকারীরাও। বাড়িটি ঘিরে ফেলে গোটা এলাকা। চলতি সপ্তাহের গোড়াতেই হরিয়ানা ও জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ যৌথভাবে ওই বাড়িতে তল্লাশি চালায় (Delhi Blast)। উদ্ধার হয় প্রায় ৩৫৮ কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, একটি AK-47 রাইফেল, একটি পিস্তল, তিনটি ম্যাগাজিন, ২০টি টাইমার এবং একটি ওয়াকি-টকি সেট।
আশপাশের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মুজাম্মিল খুব কমই বাড়িতে থাকত। বেশিরভাগ সময় নিজের কলেজ হোস্টেলেই থাকত সে। রাতে কিছুক্ষণের জন্য আসত এবং কিছু মালপত্র রেখে বেরিয়ে যেত। তার সঙ্গে বেশ কয়েকজন অচেনা লোককে দেখা গিয়েছিল, যারা মাঝেমধ্যেই গাড়ি নিয়ে আসত (Delhi Blast)।
বাড়ির মালিক জানিয়েছেন, গত ১৩ সেপ্টেম্বর মুজাম্মিল তাঁর বাড়ির উপরের তলা ভাড়া নেয়। সে নিজেকে চিকিৎসক বলে পরিচয় দিয়েছিল এবং জানায়, “চাকরি পেয়ে গিয়েছি, কিন্তু এখন থাকার জায়গা পাচ্ছি না।” তার কথায় বিশ্বাস করে মালিক বাড়ি ভাড়া দেন। ২৪০০ টাকা অগ্রিম দেয় মুজাম্মিল। তারপর থেকে তাকে আর দেখা যায়নি। শুধু মাঝরাতে হঠাৎ এসে কিছু সময় কাটিয়ে যেত, আবার চলে যেত। ভাড়াও বাকি পড়ে ছিল।
গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, এই বাড়িতেই বসে উমর ও মুজাম্মিল প্রজাতন্ত্র দিবসে লালকেল্লায় হামলার ছক কষেছিল। আল ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই বাড়ির দূরত্ব মেরে কেটে মাত্র দশ মিনিট। এখান থেকেই বিস্ফোরক পরিবহণের পরিকল্পনা তৈরি হয়।
তদন্তে আরও জানা গিয়েছে, কাশ্মীরের নওগ্রাম এলাকায় সম্প্রতি জইশ-ই-মহম্মদের সমর্থনে পোস্টার দেখা গিয়েছিল। সেখান থেকেই সূত্র ধরে পুলিশ পৌঁছে যায় মুজাম্মিলের কাছে। জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ ও হরিয়ানা পুলিশের যৌথ অভিযানে ১১ দিন আগে মুজাম্মিলকে গ্রেফতার করা হয়। সে সময় সে আল-ফালাহ মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগে কর্মরত ছিল।
গ্রেফতারের পরেই তদন্তকারীরা আসে ধাউজ গ্রামের এই বাড়িতে। তল্লাশিতে যা যা মিলেছে, তা দেখে স্তম্ভিত গোয়েন্দারাও। এক আধিকারিকের কথায়, “এই বাড়িটি ছিল পুরো জঙ্গি কমান্ড সেন্টার। এখানে বসেই পরিকল্পনা, বিস্ফোরক মজুত এবং যোগাযোগের সবকিছু চালানো হত।”
ফরিদাবাদের এই বাড়ি এখন সম্পূর্ণভাবে সিল করে দিয়েছে পুলিশ। আইবি, এনআইএ এবং হরিয়ানা ক্রাইম ব্রাঞ্চের দল একযোগে তদন্ত চালাচ্ছে। অনুমান করা হচ্ছে, এখান থেকেই দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বিস্ফোরক ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল।
তদন্তকারীদের মতে, এই মডিউল ছিল আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ (Jaish-e-Mohammed)–এর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। মুজাম্মিলের ফোন ও ডিজিটাল ওয়ালেটের মাধ্যমে তুরস্ক ও দোহা থেকে টাকা আসার প্রমাণও মিলেছে।












