ভোটার তালিকার ‘পরিমার্জন আতঙ্ক’ যেন আরও এক প্রাণ কেড়ে নিল। এবার হুগলির ধনেখালি (Dhanekhali)। মৃতার নাম আশা সোরেন। বয়স মাত্র ৩০। তাঁর পাশে ছিল ছয় বছরের কন্যা। অভিযোগ, ভোটার তালিকায় নিজের নাম না-পাওয়ার আতঙ্কেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেন তরুণী। দিন কয়েকের লড়াইয়ের পর সোমবার দুপুরে তাঁর মৃত্যু হয় কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে (Dhanekhali)।
আশা সোরেনের বাড়ি ধনেখালির (Dhanekhali) সোমসপুর–২ গ্রাম পঞ্চায়েতের কানা নদী এলাকায়। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বিয়ে হয়েছিল হরিপালে, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই দাম্পত্যে টানাপোড়েন চলছিল। তাই আশ্রয় নিয়েছিলেন বাপের বাড়িতে (Dhanekhali)। গত কয়েক বছর সেখানেই ছিলেন তিনি। সংসারে অভাব ছিল বটে, কিন্তু পরিবারের কথায়, “এমন হতাশ হওয়ার কোনও কারণ ছিল না।”
সমস্যা শুরু হয় ভোটার তালিকার নিবিড় পরিমার্জনের সময়। এলাকার প্রতিটি পরিবার ফর্ম পেলেও আশা পাননি (Dhanekhali)। পরিবারের দাবি, সেই নিয়েই শুরু হয় ভয়, উদ্বেগ, আর আতঙ্ক। ভোটার তালিকায় নাম না থাকলে নাগরিকত্ব হারাতে হবে— এমন আশঙ্কায় দিনকয়েক আগেই তিনি মেয়েকে নিয়ে বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। দু’জনকেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি করা হয় এসএসকেএম-এ। দিন কয়েকের চিকিৎসার পর মা মারা গিয়েছেন, মেয়েটি এখনও চিকিৎসাধীন (Dhanekhali)।
এই ঘটনার পর এলাকায় নেমে আসেন ধনেখালির তৃণমূল বিধায়ক অসীমা পাত্র। তিনি বলেন, “ধনেখালির অর্ধেক মানুষই তফসিলি জাতি ও উপজাতি-ভুক্ত। এঁদের অনেকের কাছেই কাগজপত্র নেই। সবাই ভয় পেয়ে গিয়েছে। ঠিক যেন নোটবন্দির সময়ের মতো— যখন ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়েই মানুষ মারা যাচ্ছিল।”
তৃণমূলের দাবি, ভোটার তালিকার যাচাইয়ের নামে বিজেপি রাজ্যে ‘ভয় ও বিভ্রান্তির রাজনীতি’ চালাচ্ছে। দলের রাজ্য নেতৃত্বের কথায়, “এসআইআর প্রক্রিয়াকে অস্ত্র বানিয়ে কেন্দ্রের নির্দেশে বাংলার প্রান্তে প্রান্তে আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। এরই বলি হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।”
বিধায়ক অসীমা পাত্র আরও অভিযোগ করেছেন, “২০০২ সালে এসআইআর হয়েছিল দু’বছর ধরে। এখন জনসংখ্যা অনেক বেড়েছে, অথচ সময় দেওয়া হচ্ছে মাত্র দুই মাস। উদ্দেশ্য একটাই— ভোটার তালিকা থেকে সংখ্যালঘু ও তফসিলি অংশের মানুষকে বাদ দেওয়া।”
পরিবারের দাবি, আশার মৃত্যু নিছক আত্মহত্যা নয়, এটা ‘ভোটের রাজনীতির বলি’। শাসক শিবিরের হিসেব, ভোটার তালিকা আতঙ্কে এখনও পর্যন্ত অন্তত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে রাজ্যে।
অন্যদিকে, বিজেপির পক্ষ থেকে এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া এখনও পাওয়া যায়নি। তবে রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এই মৃত্যু রাজ্য রাজনীতিতে নতুন সংঘাতের জন্ম দেবে। প্রশ্ন উঠছে— প্রশাসন কি মানুষের আতঙ্ক বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে, না কি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই ‘ভয়’ ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে?













