রাত পেরোলেই মহালয়া। হিন্দু রীতি মেনে এই দিনে নদী বা জলাশয়ে নেমে পূর্বপুরুষদের জলদান করে তর্পণ করেন বহু মানুষ। কিন্তু এবারে প্রশ্ন উঠছে—জলে নামা কতটা নিরাপদ? কারণ, কেরালায় ইতিমধ্যেই ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে ‘নিগ্লেরিয়া ফোলেরি’ নামে এক প্রাণঘাতী অ্যামিবার (Amoeba) সংক্রমণে। যাকে বলা হচ্ছে ‘মগজখেকো অ্যামিবা’ (Amoeba)।
চিকিৎসকরা বলছেন, এই অ্যামিবা (Amoeba) সাধারণত নোংরা, জমে থাকা বা দীর্ঘদিন ক্লোরিন ছাড়া রাখা জলাশয়ে জন্মায়। যেমন পাড়ার নোংরা পুকুর বা অপরিষ্কার সুইমিং পুল। তবে বিশেষজ্ঞদের আশ্বাস, নদীর স্রোতধারায় এই অ্যামিবার অস্তিত্ব টেকে না। তাই যারা নদীতে তর্পণ করবেন, তাঁদের আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই (Amoeba)।
ভাইরোলজিস্ট ডা. সিদ্ধার্থ জোয়ারদার বলেন, “কেরালার অ্যামিবার সঙ্গে বাংলার অ্যামিবার পার্থক্য আছে। বাংলার নোংরা পুকুরে যে অ্যামিবা থাকে, তার মারণক্ষমতা কম। সময়মতো চিকিৎসা করলে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন।” তিনি আরও জানান, বাংলার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অ্যাকান্থামিবা পাওয়া যায়, যা দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ ঘটায়, কিন্তু চিকিৎসা সম্ভব। তবে সতর্কবার্তা দিয়ে তিনি বলেন, “পাড়ার নোংরা বা বদ্ধ জলাশয়ে নামবেন না। ব্লিচিং পাউডার বা পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দিয়ে জল পরিশোধন করা উচিত।”
শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. নিশান্তদেব ঘটক বলেন, “একবার এই অ্যামিবা মস্তিষ্কে চলে গেলে ভয়ংকর ক্ষতি করে। আক্রান্ত রোগীর পক্ষাঘাত, স্মৃতিভ্রংশ, খিঁচুনি বা মানসিক ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে। তাই নোংরা জলাশয়ে স্নান এড়িয়ে চলা অত্যন্ত জরুরি।” তিনি আরও জানান, পরীক্ষা করে রোগ ধরা গেলে ওষুধে আরোগ্য সম্ভব।
বাংলায় গত দু’বছরে ২৫ জনের বেশি এই সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৭০ শতাংশকে চিকিৎসায় সুস্থ করা গেছে। তবে এ বছর ইতিমধ্যেই দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।
ডা. জোয়ারদারের কথায়, “আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। সময়মতো চিকিৎসা পেলে নাগলেরিয়া ফাউলেরি থেকেও সুস্থ হওয়া যায়। তবে সাবধানতা সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ।”