লস্কর-ই-তইবা (LeT) আবারও নিজেদের ঘাঁটি গড়তে শুরু করেছে। ভারতের বিমান হামলায় ধ্বংস হওয়া পাকিস্তানের মুরিদকির মার্কাজ তাইবা সদর দপ্তর ভেঙে ফেলা হয়েছে পুরোপুরি (Pakistan)। এবার নতুন করে সেই সদর দপ্তর বানানো শুরু হয়েছে। এই কাজের জন্য সরকারি তহবিল ও বন্যার্তদের জন্য পাঠানো সাহায্যের টাকা ব্যবহার করছে জঙ্গি সংগঠনটি—এমনই দাবি গোয়েন্দাদের (Pakistan)।
গত ৭ মে “অপারেশন সিঁদুর”-এর সময় ভারতীয় বিমান বাহিনী মুরিদকির সদর দপ্তরে বড়সড় আঘাত হানে (Pakistan)। তখন তিনটি মূল ভবন ধ্বংস হয়ে যায়—একটি ছিল জঙ্গিদের থাকার জায়গা, একটি অস্ত্র মজুত রাখার ঘর আর আরেকটি ছিল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। হামলার পর ভবনগুলির শুধু ভাঙা দেওয়ালই পড়ে ছিল, ব্যবহার করার মতো কিছুই বাকি ছিল না।
১৮ আগস্ট থেকে ভাঙা ভবন সরানোর কাজ শুরু হয়। পাঁচটি জেসিবি মেশিন দিয়ে পুরো জায়গা পরিষ্কার করা হয়। ২০ আগস্টে উম্ম-উল-কুরা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ভাঙা শুরু হয়, ৪ সেপ্টেম্বর পুরোপুরি মাটিতে মিশে যায়। ৭ সেপ্টেম্বর শেষ আবাসিক ব্লকও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এখন জায়গাটা একেবারে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যেই নতুন করে নির্মাণের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে (Pakistan)।
সরকারি টাকা দিয়ে জঙ্গি ঘাঁটি!
মে মাসের যুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তান সরকার প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছিল, রাষ্ট্রপুষ্ট জঙ্গি সংগঠনগুলির ক্ষতিগ্রস্ত ঘাঁটি সরকারই আবার তৈরি করে দেবে। সেই প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবেই ১৪ আগস্ট ইসলামাবাদ থেকে লস্কর-ই-তইবাকে দেওয়া হয় প্রথম কিস্তি—৪ কোটি পাকিস্তানি টাকা (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১.২৫ কোটি টাকা)। কিন্তু সংগঠনটির হিসাব অনুযায়ী পুরো ঘাঁটি আবার গড়তে খরচ হবে অন্তত ১৫ কোটি পাকিস্তানি টাকা (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৪.৭০ কোটি টাকা)।
অর্থের ঘাটতি মেটাতে লস্কর আবারও নামছে পুরনো খেলায়। এবারও “বন্যার্তদের ত্রাণ” নামে অনলাইনে ও সরাসরি চাঁদা তোলা শুরু হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে সেই টাকা বন্যার্তদের হাতে পৌঁছচ্ছে না, বরং সদর দপ্তর ও ক্যাম্প পুনর্গঠনে ঢালছে সংগঠনটি।
২০০৫ সালের ভূমিকম্পের সময়ও একই কায়দায় কোটি কোটি টাকা তুলেছিল লস্কর। তখন জঙ্গি সংগঠনটি জামাত-উদ-দাওয়া নাম নিয়ে মানবিক সাহায্যের নামে টাকা তুলেছিল। পরে তদন্তে ধরা পড়ে, অন্তত ৮০ শতাংশ টাকা খরচ হয়েছিল জঙ্গি ঘাঁটি বানাতে। সেই টাকাতেই তৈরি হয়েছিল কটলির মার্কাজ আব্বাস—যেটি এ বছর ভারতের বিমান বাহিনী আবার ধ্বংস করেছে।
এবারও একই ফন্দি। ক্যাম্পে সামান্য ত্রাণ বিলি করছে লস্করের কর্মীরা (Pakistan), ছবি তুলছে পাকিস্তানি সেনা আর রেঞ্জার্সদের সঙ্গে। বাইরে থেকে দেখলে মনে হচ্ছে মানবিক সাহায্য, কিন্তু ভেতরে ভেতরে গড়ে উঠছে নতুন জঙ্গি ঘাঁটি।
নতুন সদর দপ্তর তৈরির দায়িত্বে কারা?
পুরো কাজ তদারকি করছেন লস্করের বড় নেতারা (Pakistan)—মার্কাজ তাইবার ডিরেক্টর মাওলানা আবু জার, প্রধান প্রশিক্ষক উস্তাদ উল মুজাহিদিন এবং অপারেশনাল ইনচার্জ ইউনুস শাহ বুখারি।
ভারতীয় হামলার পর জঙ্গি প্রশিক্ষণ ও থাকার জায়গা আগে সরানো হয় বাহাওয়ালপুরের মার্কাজ আকসায় (Pakistan)। জুলাইয়ের মধ্যে আবার সরিয়ে নেওয়া হয় কাসুর জেলার পাতোকির মার্কাজ ইয়ারমুকে। এই ক্যাম্পগুলির দায়িত্বে আছেন আব্দুল রশিদ মোহসিন।
গোয়েন্দাদের দাবি, এবারও বন্যা ত্রাণের নামে টাকা তোলা হচ্ছে, কিন্তু সেটাই আসল উদ্দেশ্য নয়। খুব দ্রুত ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ শেষ করে নতুন ভবন বানানো হবে। লস্করের টার্গেট—২০২৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি “কাশ্মীর সংহতি দিবস”-এর আগেই সদর দপ্তরের কাজ শেষ করা। কারণ, সেই অনুষ্ঠান লস্করের সবচেয়ে বড় প্রচার মঞ্চ।