একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও শেষ হয়নি পণপ্রথার অভিশাপ। তারই মর্মান্তিক শিকার হলেন বছর আঠাশের তরুণী মা নিকি ভাটি (Noida)। বিয়ের নয় বছর পরও, ছয় বছরের সন্তান থাকা সত্ত্বেও তাঁর শ্বশুরবাড়ির দাবি-দাওয়া থামেনি। পরিবারের পণের দাবিকে অস্বীকার করাতেই ঘটল ভয়াবহ পরিণতি। অভিযোগ উঠেছে, স্বামী বিপিন ভাটি এবং শাশুড়ি মিলে নিকিকে জীবন্ত আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে (Noida)।
ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ এখন ভাইরাল। সেখানে দেখা গেছে, আগুনে দগ্ধ অবস্থায় নিকি সিঁড়ি বেয়ে নামছেন (Noida), শরীর জুড়ে পোড়া ক্ষত আর রক্তের দাগ। এক ভিডিওতে তাঁকে মেঝেতে বসে থাকতে দেখা যায়, নিস্তেজ অথচ বাঁচার জন্য মরিয়া। শেষমেশ তাঁকে গুরুতর অবস্থায় দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কয়েকদিন লড়াই করার পর বৃহস্পতিবারই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (Noida)।
পুলিশ ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে নিকির স্বামী বিপিন ভাটিকে এবং তাঁর মাকেও। কিন্তু এখানেই শেষ হয়নি চাঞ্চল্য। রবিবার (২৪ আগস্ট) বিপিন পুলিশ হেফাজত থেকে পালানোর চেষ্টা করে। পুলিশকর্মীর পিস্তল ছিনিয়ে নিয়ে পালাতে চাইলে গুলি চালাতে বাধ্য হয় পুলিশ। গুলি লাগে বিপিনের পায়ে, বর্তমানে সে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সবচেয়ে ভয়ঙ্কর চিত্র ধরা পড়ে হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা বিপিনের কথায়। সাংবাদিকরা যখন তাঁকে প্রশ্ন করলেন, স্ত্রীর হত্যায় তাঁর কি কোনো অনুতাপ আছে? তখন নির্লজ্জভাবে সে উত্তর দেয়, “আমার কোনও অনুতাপ নেই। আমি ওকে মারিনি। ও নিজেই মরে গিয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হতেই পারে, এটা খুব স্বাভাবিক।”
কিন্তু বিপিনের এই কথা মিথ্যে প্রমাণ করেছে তার নিজের ছয় বছরের ছেলের বয়ান। শিশুটি পুলিশকে বলেছে, “প্রথমে বাবারা মাম্মার গায়ে কিছু একটা ঢেলে দেয়। তারপর চড় মারে। আর তারপর লাইটার দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।” প্রশ্ন করা হলে যে বাবাই কি মাকে মেরেছে, ছোট্ট ছেলে মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলে।
এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই তোলপাড় গোটা দেশ। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন সমাজকর্মী ও মানবাধিকার কর্মীরা। প্রশ্ন তুলেছেন—আজও যদি একজন মা পণের দাবিতে এভাবে পুড়ে মরতে হয়, তবে আমাদের সমাজ কোন দিকে যাচ্ছে?
নিকির মৃত্যু কেবল একটি পরিবারের কান্না নয়, বরং পুরো সমাজের বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছে। স্বামী-শাশুড়ির হাতেই যখন গৃহবধূর জীবন শেষ হয়ে যায়, তখন আর কাকে ভরসা করা যায়?