আজকের পৃথিবী অস্থির। শুধু সম্পর্ক বা ব্যক্তিগত জীবনে নয়, চাকরির ক্ষেত্রেও অনিশ্চয়তা বেড়েই চলেছে। তাই এখন সবার জন্যই একটি বাড়তি আয়ের উৎস থাকা শুধু স্বপ্ন নয়, বরং প্রয়োজনীয় কৌশল (New Business Idea)। এই কারণেই জেন জি আর মিলেনিয়াল প্রজন্ম ভাড়ার সম্পত্তিতে বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকছে। তারা বুঝে গেছে, শুধু একটি চাকরির বেতনের ওপর নির্ভর করলে হবে না (New Business Idea)।
আগে বাড়ি মানে ছিল নিরাপত্তা বা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে উত্তরাধিকার (New Business Idea)। এখন ছবি একেবারে পাল্টে গেছে। আজকের তরুণ বিনিয়োগকারীরা সম্পত্তিকে কেবল বাসস্থান হিসেবে নয়, আয়ের হাতিয়ার হিসেবে দেখছে। কেউ এয়ারবিএনবি-স্টাইল ভাড়া দিচ্ছে, কেউ কো-লিভিং স্পেস তৈরি করছে, আবার কেউ এমন বাড়ি বানাচ্ছে যেখানে বসবাসের পাশাপাশি কনটেন্টও তৈরি করা যায় (New Business Idea)।
সি ব্রিজ গ্রুপের সিইও অর্পিত বানসাল বলছেন, “তরুণরা শুধু একটি বেতনেই আটকে নেই। তারা একাধিক আয়ের উৎস তৈরি করছে। ভাড়ার আয় তাদেরকে ৯-৫ এর চাকরির বাঁধন থেকে মুক্তি দিচ্ছে।” অন্যদিকে, আক্রুতি প্রপার্টিজ-এর ম্যানেজিং পার্টনার মঞ্জুনাথ ভি বলছেন (New Business Idea), “তারা এখন আরও বেশি ফিনান্স-অরিয়েন্টেড। টেকনোলজি ব্যবহার করে ভাড়ার আয়, রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট সবকিছু হিসেব করছে।”
শিলিগুড়ির শেওয়াঙ্গী ছেত্রীর গল্প এই নতুন প্রজন্মের পথচলার সেরা উদাহরণ। একঘেয়ে চাকরির জীবনে ক্লান্ত হয়ে সে একবার বন্ধুদের সঙ্গে গোয়া ঘুরতে গিয়ে এক এয়ারবিএনবি হোস্টের সঙ্গে দেখা করে। সেই মানুষটি সারা বিশ্ব ঘুরে বেড়াচ্ছেন আর একসঙ্গে ভাড়া ব্যবসাও চালাচ্ছেন। এখান থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে শেওয়াঙ্গী চাকরি ছেড়ে নিজেই এয়ারবিএনবি ব্যবসা শুরু করে। আজ সে শুধু নিজে ব্যবসা করছে না, বরং তার ইনস্টাগ্রাম ফলোয়ারদের সঙ্গে প্রতিদিন শেয়ার করছে নিজের শেখার অভিজ্ঞতা।
একইভাবে কৃষ্ণনগরের ২৫ বছরের সুশ্মিতা প্রামাণিক মানালিতে শুরু করেছে নিজের হোমস্টে। পাহাড়ের কোলে নতুন জীবন শুরু করার পাশাপাশি সে ধীরে ধীরে ভ্রমণ ব্যবসাও বাড়াচ্ছে। নিজের কমিউনিটি ‘অফ দ্য কাফ’-এর মাধ্যমে সে প্রতিদিন ইনস্টাগ্রামে জানাচ্ছে কিভাবে একেবারে শূন্য থেকে ব্যবসা দাঁড় করিয়েছে।
করোনার সময় বাড়ি থেকে কাজ করার চল বেড়ে যাওয়ায় এই ধারা আরও ত্বরান্বিত হয়। বিশেষ করে গোয়া ও মানালিতে অনেক ডিজিটাল নোম্যাড গিয়ে বসতি গড়েছে। এই ধারা আজও থামেনি। বিশেষজ্ঞদের মতে, দ্বিতীয় সারির শহর ও ছুটি কাটানোর জায়গাগুলো আজ বিনিয়োগকারীদের কাছে আবেগ ও অর্থ—দুটোই ফিরিয়ে দিচ্ছে।
তবে সবকিছুরই উল্টো দিক আছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক সময় রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগকে খুবই ঝকঝকে ও সহজভাবে দেখানো হয়। কিন্তু বাস্তবে এতে রয়েছে রক্ষণাবেক্ষণ, ভাড়াটের সমস্যা, আইনি জটিলতা ও স্থানীয় নিয়মকানুনের মতো বড় বাধা। তাই বাড়ি কিনতে গেলে শুধু সুন্দর দৃশ্য দেখে নয়, লাভের হিসেব করে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে এগোতে হবে।
অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীদের মতে, ছোট থেকে শুরু করতে হবে, আইনি দিক পরিষ্কার রাখতে হবে, টেক টুল ব্যবহার করে ভাড়া সংগ্রহ ও খরচের হিসেব রাখতে হবে। আর সবকিছুর শেষে এটাকে একটি ব্যবসার মতো চালাতে হবে। অন্যথায় ভাড়ার আয় “প্যাসিভ ইনকাম” না হয়ে বাড়তি ঝামেলায় পরিণত হতে পারে।
শেষ পর্যন্ত বলা যায়, এই অনিশ্চিত অর্থনীতির সময়ে ভাড়ার রিয়েল এস্টেট হয়ে উঠছে এক বিরল ভরসা। ঠিকভাবে করলে এই সম্পত্তি ঘুমের মধ্যেও আয় এনে দিতে পারে এবং স্বাধীন জীবনের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারে।