ভোরবেলা গরম গরম চায়ের কাপে চুমুক – এ যেন ভারতীয় ঘরে ঘরে এক চিরচেনা অভ্যাস। এলাচ-আদার গন্ধে ভেসে ওঠা চায়ের কাপে (Tea Time) শুধু ঘুম ভাঙে না, পরিবারের সবার সঙ্গে একটু সময় কাটানোও হয়। কিন্তু সেই চা-আড্ডা যদি দিনে তিন-চার কাপের বেশি হয়ে যায়, তখনই থামতে হবে আর ভেবে দেখতে হবে – শরীরের জন্য এটা কতটা ভালো?
এই প্রশ্নের উত্তর দিলেন সেলিব্রিটি নিউট্রিশনিস্ট ঋজুতা দেওয়েকর। দেশি খাবার, সময় মেনে খাওয়া আর মৌসুমি ফল–সবকিছুকেই তিনি ভীষণ গুরুত্ব দেন। দামি খাবার বা বিদেশি গ্রেন নয়, শরীরের ভারসাম্য রাখাই তাঁর আসল মন্ত্র। সম্প্রতি লালান্তপ-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, একজন সাধারণ মানুষের দিনে দুই থেকে তিন কাপ চা (Tea Time) খাওয়া যথেষ্ট। তাঁর কথায়, “আপনি যদি নিয়ম মেনে চলেন, তাহলে দিনে দু’-তিন কাপের বেশি চা খাওয়া উচিত নয়।”
কেবল পরিমাণের সীমা নয়, কীভাবে ও কখন চা খাওয়া (Tea Time) উচিত, সেই নিয়েও তিনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস দিয়েছেন।
ঋজুতার মতে, খালি পেটে ঘুম থেকে উঠে সঙ্গে সঙ্গে চা বা কফি খাওয়া (Tea Time) উচিত নয়। কারণ ক্যাফেইন শরীরকে হঠাৎ ঝাঁকুনি দিয়ে তোলে, রক্তচাপ বাড়ায়, হৃৎস্পন্দন দ্রুত করে, ফলে শরীর অস্থির হয়ে যায়। আমরা একে জেগে ওঠা ভাবি, কিন্তু আসলে শরীরের উপর বাড়তি চাপ পড়ে। তিনি পরামর্শ দিয়েছেন, সকালে যদি বড় খাবার খেতে না পারেন, তাহলে অন্তত একটি ফল খাওয়া উচিত। যেকোনো টাটকা ফল খাওয়া ভালো, তবে তার সঙ্গে লবণ, চাটমসলা বা চিনি মেশানো যাবে না এবং জুস বানানোও উচিত নয়। এতে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকে, হজমে সাহায্য করে এবং সারাদিনের জন্য প্রাকৃতিক শক্তি জোগায়।
তিনি আরও বলেন, বিকেল ৪টার পর চা খাওয়া এড়ানো উচিত, কারণ এতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এছাড়া চা খেয়ে কখনও খাবার বাদ দেওয়া উচিত নয়, কারণ তাতে শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয়। চা প্রকৃতিগতভাবেই অ্যাসিডিক এবং এতে থাকা ক্যাফেইন ও পলিফেনল হজমপ্রণালীতে অস্বস্তি তৈরি করতে পারে। তাই পরিমাণ ও সময় খুব জরুরি।
আর চা-বিস্কুট বা চা-সঙ্গে ভাজাভুজির প্রসঙ্গে ঋজুতা বলেছেন, নানখাটাই, রস্ক, পকোড়া, কচুরি—এসবের সঙ্গে চা খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করা উচিত। এগুলো শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল বাড়ায় এবং পুষ্টির মূল্য নেই। এর পরিবর্তে ভাজা মাখানা, মিশ্র বীজ বা কালো ছোলা খাওয়া অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর।
অতএব, সামান্য কিছু নিয়ম মেনে চা খেলেই শরীর ভালো থাকবে আর আড্ডাও চলবে নিশ্চিন্তে। সঠিক সময়ে, সঠিক পরিমাণে আর সঠিক সঙ্গেই হলে চায়ের কাপে গল্প জমবে কোনো অপরাধবোধ ছাড়াই।