আর মাত্র চারদিন পর তৃণমূল কংগ্রেসের শহিদ দিবস। প্রতিবছরের মতো এবারও ধর্মতলার ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে এই রাজনৈতিক সমাবেশ। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ কর্মী-সমর্থকের ঢল নামার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যেই কলকাতা পুলিশ পক্ষ থেকে ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণে একাধিক বিজ্ঞপ্তিও জারি হয়েছে। তবে এই রাজনৈতিক সভা ঘিরে এবার বিরক্তি প্রকাশ করল কলকাতা হাই কোর্ট (Calcutta High Court)।
২১ জুলাই শহিদ দিবসের সভা সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক যাতায়াতে বড়সড় বিঘ্ন ঘটায়—এই অভিযোগে দায়ের হওয়া একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানি হয় কলকাতা হাই কোর্টে v। বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের বেঞ্চে ওঠে সেই মামলা। মামলাকারীর তরফে দাবি করা হয়, এই ধরণের সভা কর্মদিবসে হওয়ায় শহরবাসীর দৈনন্দিন জীবন চরমভাবে ব্যাহত হয়। তীব্র যানজট, অফিস-আদালতে পৌঁছতে অসুবিধা, রোগী পরিবহনে বিলম্ব—সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষ কার্যত বন্দি হয়ে পড়েন (Calcutta High Court)।
এই প্রেক্ষিতে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ (Calcutta High Court) স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “আমি এই সভা নিয়ে কিছু শর্ত জারি করব।” তিনি আরও বলেন, “আবেগ তো সব রাজনৈতিক দলেরই থাকে, কিন্তু প্রশ্ন হল—এই ভোগান্তি আর কতদিন চলবে? শহরের রাস্তাঘাটের এক-তৃতীয়াংশ যেন রাজনৈতিক সভার দখলে চলে যায়।”
তবে আদালত (Calcutta High Court) সভাস্থল পরিবর্তনের কোনও নির্দেশ দেননি, কারণ অনুষ্ঠান হতে আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। তবুও ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, রাজ্য সরকার আগামী বছর থেকে এই সভার বিকল্প স্থান খোঁজার চেষ্টা করুক। শহিদ মিনার ময়দান কিংবা ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড এই ধরণের জনসমাবেশের জন্য আরও উপযুক্ত কি না, তা নিয়ে ভাবতে বলেন বিচারপতি।
তিনি সুপারিশ করেন, “কলকাতার মতো ব্যস্ত শহরে এমন বিশাল জনসমাগমের অনুষ্ঠান যদি করতেই হয়, তাহলে অন্তত সকাল ১১টার পর শুরু করা হোক, যাতে সকাল সকাল অফিসযাত্রী ও সাধারণ মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তি পান।”
এই মামলার প্রেক্ষিতে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত আদালতের কাছে মামলার গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, “এই ধরণের মামলা আদৌ গ্রহণযোগ্য কি না, তা খতিয়ে দেখা উচিত।” মামলাকারীর অভিপ্রায় নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন রাজ্যপক্ষের আইনজীবী বিশ্বরূপ ভট্টাচার্য। তাঁর বক্তব্য, “এটি একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও রাজনৈতিক প্রভাবযুক্ত মামলা। কেউ সভা বাতিলের দাবি তোলেনি, কিন্তু উদ্দেশ্য স্পষ্ট।”
জবাবে বিচারপতি বলেন, “ট্র্যাফিক পরিস্থিতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মামলাকারী অতীত বছরগুলির ট্রাফিক প্রতিবেদন তুলে ধরেছেন, যেখানে দেখা যাচ্ছে কীভাবে এই ধরণের সভার কারণে শহরের স্বাভাবিক গতিবিধি লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়।”
শুনানি চলাকালীন বিচারপতি এও নির্দেশ দেন, ২১ জুলাই সভা উপলক্ষে কলকাতা পুলিশ যে ট্রাফিক বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে, তা শুক্রবারের মধ্যে আদালতে জমা দিতে হবে। এরপরই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। সেইসঙ্গে আদালতের তরফে কিছু স্পষ্ট শর্ত আরোপ করা হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন বিচারপতি।