দীর্ঘ এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে যিনি ছুটে চলেছেন জীবনের প্রতিটি পথে, যাঁকে আটকাতে পারেনি বয়স, রুগ্নতা কিংবা ক্লান্তি—শেষ পর্যন্ত সেই অদম্য দৌড় থামিয়ে দিল এক মর্মান্তিক পথদুর্ঘটনা (Fouja Singh)। ১১৪ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন কিংবদন্তি ম্যারাথন রানার ফৌজা সিং। সোমবার পাঞ্জাবের জলন্ধর-পাঠানকোট হাইওয়েতে আচমকা একটি গাড়ি ধাক্কা মারলে তাঁর গুরুতর চোট লাগে (Fouja Singh)। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও, শেষরক্ষা হয়নি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় এই প্রবীণ দৌড়বিদের (Fouja Singh)।
ফৌজা সিংয়ের জন্ম ১৯১১ সালের ১ এপ্রিল, পাঞ্জাবের জলন্ধরে। তবে জীবনের দৌড়ে তিনি দৌড়ানো শুরু করেন অনেক দেরিতে। যখন বেশিরভাগ মানুষ অবসর জীবনে বিশ্রাম খোঁজেন, তখন ৮৯ বছর বয়সে প্রথম বার রেসের ট্র্যাকে নামেন ফৌজা (Fouja Singh)। ২০০০ সালে লন্ডন ম্যারাথনে অংশ নিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেন। এরপর তিনি হয়ে ওঠেন আন্তর্জাতিক ম্যারাথন অঙ্গনের এক অবিস্মরণীয় মুখ (Fouja Singh)।
টরন্টো, নিউ ইয়র্ক, লন্ডন—প্রতিটি শহরের রাস্তায় তিনি ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। টরন্টো ম্যারাথনে তাঁর সেরা সময় ছিল ৫ ঘণ্টা ৪০ মিনিট ৪ সেকেন্ডে ৪২ কিলোমিটার দৌড় সম্পন্ন করা (Fouja Singh)। তাঁর অসামান্য জার্নি শুধুই দৌড়ের সীমায় আটকে থাকেনি। ২০০৪ সালের আথেন্স এবং ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকে অলিম্পিক মশাল বহন করেছেন তিনি (Fouja Singh)।
বিশ্বখ্যাত ফুটবল তারকা ডেভিড বেকহ্যাম ও কিংবদন্তি বক্সার মহম্মদ আলির সঙ্গে বিজ্ঞাপনেও দেখা গিয়েছে ফৌজাকে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি পাঞ্জাবের নেশামুক্তি আন্দোলনের অন্যতম মুখ হয়ে উঠেছিলেন। সমাজকল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ ফৌজা সম্প্রতি পাঞ্জাবে একটি দুই দিনব্যাপী পদযাত্রার আয়োজন করেছিলেন, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল মাদকবিরোধী বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া। সেই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন পাঞ্জাবের রাজ্যপাল গুলাব চাঁদ কাটারিয়াও।
১০২ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক দৌড়ে অংশ নেওয়া এই ‘টার্বান্ড টর্নেডো’ এরপর আর প্রতিযোগিতায় নামেননি ঠিকই, কিন্তু থেমে যাননি সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালন থেকে। মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত দিব্যি হেঁটে-চলে সচেতনতা ছড়িয়েছেন সর্বত্র।
ফৌজার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন পাঞ্জাবের রাজ্যপাল সহ গোটা ক্রীড়া মহল। তাঁর সন্তানরা বর্তমানে দেশের বাইরে রয়েছেন। তাঁরা দেশে ফিরলে শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।
১১৪ বছর বয়সেও যিনি ছিলেন দৌড়ের প্রতীক, অবসান ঘটল তাঁর জীবনের অসামান্য দৌড়ের। কিন্তু যেভাবে তিনি প্রেরণার বাতি জ্বালিয়ে গিয়েছেন, তা বহু প্রজন্মকে পথ দেখাবে।