নদিয়ার (Nadia) চাকদহে ঘটল এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। মাত্র একটি জামা না কিনে দেওয়ার কারণে আত্মহত্যা করলেন এক শিক্ষিতা তরুণী। এমএ পাশ করা চন্দনা সরকারের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে নিজ বাড়ি থেকে। ঘটনার পর গোটা এলাকায় নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া।
চাকদহ থানার (Nadia) চাদুরিয়া এলাকার বাসিন্দা চন্দনা সরকারের পরিবার বহুদিন ধরেই অভাব-অনটনের সঙ্গে লড়াই করে আসছিল। বাবা বিশ্বনাথ সরকার দিনমজুর, মা শ্যামলী সরকার পরিচারিকার কাজ করেন। চন্দনা নিজেও লেখাপড়ার পাশাপাশি টিউশন পড়াতেন এবং স্থানীয় একটি মোমবাতির কারখানাতেও কাজ করতেন। সমস্ত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও পড়াশোনায় দমে যাননি তিনি (Nadia)। এমএ পরীক্ষাও দিয়েছিলেন সবে। কিন্তু সংসারের সীমিত সামর্থ্যের কারণে তাঁর একটা সাধ পূরণ হল না — আর সেই অপূর্ণ ইচ্ছাই তাঁর জীবন কেড়ে নিল।
ঘটনার দিন মা-মেয়ে মিলে বাজারে গিয়েছিলেন জামা-কাপড় কিনতে (Nadia)। কিছু কাপড় কেনাও হয়। ফেরার সময় একটি জামা দেখে খুব পছন্দ হয়ে যায় চন্দনার। তিনি মাকে অনুরোধ করেন জামাটি কিনে দেওয়ার জন্য। কিন্তু শ্যামলী দেবী বলেন, তখন তাঁদের হাতে অত টাকা নেই। তিনি মেয়েকে বলেন, “লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা পেলে কিনে দেব।” চন্দনা তখন কোনও কথা বলেননি, চুপচাপ বাড়ি ফিরে আসেন।
এরপরেই ঘটে ভয়ঙ্কর ঘটনা। বাড়ি ফিরে মাকে তিনি জ্যাঠার বাড়ি পাঠিয়ে দেন (Nadia)। ঘণ্টাখানেক পর মা ফিরে এসে মেয়েকে ডাকলেও সাড়া মেলে না। ঘরের দরজা খুলতেই চোখে পড়ে হৃদয়বিদারক দৃশ্য — গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলছেন চন্দনা। শ্যামলী দেবীর কান্নায় গোটা বাড়ি কেঁপে ওঠে। প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। চন্দনাকে দ্রুত নিয়ে যাওয়া হয় চাকদহ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
চাকদহ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেহটি উদ্ধার করে পাঠায় জওহরলাল নেহরু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য। প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যার মামলা রুজু করেছে পুলিশ, তবে চন্দনার এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে শুধুই একটি জামা না পাওয়া দায়ী, নাকি অন্য কোনও গোপন কারণ আছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
চন্দনার মা শ্যামলী সরকার কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। নিজেকে বারবার দোষ দিচ্ছেন। কাঁদতে কাঁদতে বলছেন, “আমার কাছে যদি টাকা থাকত, জামাটা কিনে দিতাম। বলেছিলাম তো, পয়সা পেলেই কিনে দেব। কিন্তু সে আর অপেক্ষা করল না…।” তাঁর আর্তনাদে স্তব্ধ গোটা পরিবার এবং প্রতিবেশীরা।