মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম দীর্ঘ ও ভয়ঙ্কর বিদ্রোহের অবসান হতে চলেছে—এমনই এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী রইল উত্তর ইরাক। কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (PKK)-র ডজন খানেক সশস্ত্র সদস্য তাদের অস্ত্র জমা দিয়েছে ইরাকের সুলেমানিয়ার কাছে দুকান শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত একটি গোপন গুহায়। এই ‘জাসানা’ নামক গুহায় কড়া নিরাপত্তার মধ্যেই আয়োজিত হয় এই প্রতীকী নিরস্ত্রীকরণ অনুষ্ঠান (Turkey)।
এই দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করেছে তুরস্কের (Turkey) বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল। পাহাড়ি এলাকায় জড়ো হয়েছিল কুর্দি জনগণসহ বহু মানুষ—অনেকেই বলছেন, এটি কুর্দি-তুর্কি (Turkey) ইতিহাসে এক “বিরল ও মোড় ঘোরানো মুহূর্ত”।
PKK, যারা ১৯৮৪ সাল থেকে তুরস্কের (Turkey) বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে আসছে, এবং যাদের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছে তুরস্ক (Turkey), যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন—তারা ২০২৫ সালের মে মাসে ঘোষণা করে যে তারা অস্ত্র ত্যাগ করে দল ভেঙে দেবে এবং আলাদা রাষ্ট্র গঠনের দাবি থেকেও সরে আসবে। এই বিস্ময়কর সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছেন দলের কারাবন্দি প্রতিষ্ঠাতা ও আদর্শিক নেতা আব্দুল্লাহ ওজালান, যিনি বহু বছর ধরে তুরস্কের ইমরালি দ্বীপে বন্দী (Turkey)।
বিগত কয়েক দশকে একাধিক শান্তি উদ্যোগ ব্যর্থ হলেও, এবার পরিস্থিতি একেবারে ভিন্ন। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এবারই সবচেয়ে ‘গভীর ও বিশ্বাসযোগ্য’ প্রচেষ্টা চলছে একটি স্থায়ী সমাধানের পথে (Turkey)।
সূত্রমতে, জমা দেওয়া অস্ত্রগুলোকে পরে একটি আলাদা অনুষ্ঠানে জনসমক্ষে ধ্বংস করা হবে। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন তুরস্ক ও ইরাকের গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি, কুর্দিস্তান আঞ্চলিক সরকারের (KRG) কর্মকর্তারা এবং তুরস্কের প্রো-কুর্দিশ ডেমোক্রেটিক ইক্যুয়ালিটি পার্টির (DEM) সিনিয়র নেতারা, যারা এই শান্তি প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
তুরস্কের ক্ষমতাসীন একে পার্টির পক্ষ থেকে এ ঘটনাকে ‘স্বাগতযোগ্য পরিবর্তন’ বলা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান নিজে ঘোষণা করেছেন, এই অস্ত্রবিরতি ও শান্তি প্রয়াসের সুযোগে তিনি দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কে পুনর্গঠন কাজ শুরু করবেন—যেখানে মূলত কুর্দি জনগোষ্ঠী বসবাস করে এবং যেখানেই দীর্ঘকাল ধরে সবচেয়ে বেশি সংঘর্ষ হয়েছে।
তুরস্কের অর্থমন্ত্রী মেহমেত শিমশেক জানিয়েছেন, বিগত ৫০ বছরে সন্ত্রাস দমনে তুরস্ক ব্যয় করেছে প্রায় ১.৮ ট্রিলিয়ন ডলার!
এই নিরস্ত্রীকরণ শুধু তুরস্কেই নয়, বরং গোটা মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে একটি নতুন সমীকরণের জন্ম দিতে পারে। বিশেষ করে সিরিয়ায়, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত কুর্দি বাহিনীকে তুরস্ক বরাবরই পিকেকের শাখা বলে মনে করে। বাশার আল-আসাদের সরকার পতনের পর সিরিয়ার নিরাপত্তা কাঠামো পুনর্গঠনের যে আলোচনা চলছে, সেখানে এই ঘটনা বিশাল প্রভাব ফেলতে পারে।