মাথায় পানীয় ভর্তি গ্লাস। গায়ে বলিউডের হিট গান ‘জামাল কুদু’-র তালে ঝাঁকুনি। সামনে বেলি ড্যান্সার। আর তাঁর সঙ্গে তাল মিলিয়ে কোমর দোলাচ্ছেন এক যুবক (TMCP Leader)। সেটাও কোনও নাইট ক্লাব বা ব্যক্তিগত পার্টি নয়—অভিযোগ, ঘটনাটি ঘটে বেলঘরিয়ার নামী ভৈরব গাঙ্গুলি কলেজের বার্ষিক উৎসবে। আর ওই যুবক? বছর দশেক আগে কলেজ থেকে পাশ করা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রাক্তন নেতা রানা বিশ্বাস (TMCP Leader), যাঁর মা কামারহাটি পুরসভার কাউন্সিলর। ভিডিও ভাইরাল হতেই উঠেছে ঝড়। শাসক দলের ছাত্র সংগঠনকে নিশানা করেছে সিপিএম থেকে বিজেপি—সব বিরোধী দলই। যদিও বিষয়টিকে হালকাভাবে নিচ্ছে তৃণমূল নেতৃত্ব (TMCP Leader)।
তৃণমূল (TMCP Leader) পরিচালিত কামারহাটি পৌরসভার চেয়ারম্যান গোপাল সাহা স্বীকার করেছেন, তিনি ওই নাচ দেখেছেন। তবে তাঁর মতে, “ফেস্টে একটু নাচগান থাকতেই পারে, এতে কোনও অশালীনতা দেখিনি।” তাঁর দাবি, ভিডিওয় যে গ্লাস দেখা যাচ্ছে, তা আদৌ মদের গ্লাস কিনা তা নিয়ে তিনি নিশ্চিত নন।
যদিও কলেজের অধ্যক্ষ শুভ্রনীল সোম স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, “এই ভিডিওটি আমাদের কলেজের ফেস্টের অংশ নয়। আমি ২০২১ সালে যোগ দিই। এরপর ২০২৫ সালে কলেজে একটি মাত্র ফেস্ট হয়েছে, সেটি খোলা মাঠে সকল ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে। ভিডিওটি ওই অনুষ্ঠানের নয়, আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি।”
রানা বিশ্বাস (TMCP Leader) নিজেও দাবি করেছেন, এটি কলেজের ফেস্ট নয়, বরং এক বিবাহবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তোলা। তাঁর বক্তব্য, “সেদিন আমায় টেনে নিয়ে গিয়ে বলা হয় একটু নাচো। নেচে ফেলি। গ্লাসে কী ছিল সেটা নিয়ে আমি নিশ্চিত নই। আর বিয়েবাড়িতে নাচাও কি অপরাধ?” তবে তিনি স্বীকার করেছেন, কলেজের আমলে তিনি ফেস্টে নিয়মিত নাচতেন এবং এবছরও কলেজ থেকে নিমন্ত্রণ পেয়েছিলেন।
তবে এই ঘটনা এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। সম্প্রতি সাউথ কলকাতা ল কলেজে ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতাদের নাম জড়ানোর পর একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড প্রকাশ্যে আসছে। কোথাও ছাত্রদের গোপনাঙ্গ দেখানোর অভিযোগ, কোথাও আবার ছাত্রীকে দিয়ে মাথা টিপিয়ে নেওয়ার মতো ছবি ভাইরাল হয়েছে।
এই আবহে রানা বিশ্বাসের ‘বেলি ডান্স ভিডিও’ সামনে আসতেই বিরোধীরা একযোগে তৃণমূলকে তুলোধোনা করেছে। সিপিএম নেতা সায়নদীপ মুখোপাধ্যায় বলেছেন, “ভৈরব গাঙ্গুলি কলেজ এক সময় বেলঘরিয়া-কামারহাটির গর্ব ছিল। আজ তৃণমূলের ছত্রছায়ায় সেটা বারে পরিণত হয়েছে।” গার্গী চট্টোপাধ্যায় আরও সরাসরি অভিযোগ করেন, “ত্রিণাঙ্কুর ভট্টাচার্যের প্রশ্রয়েই এসব হচ্ছে। কলেজগুলো এখন উঠতি নেতাদের ফুর্তির জায়গা হয়ে উঠেছে।”
অর্জুন সিংয়ের মতো বিজেপি নেতাও মন্তব্য করেন, “রানা বিশ্বাসরা মাথায় মদের গ্লাস নিয়ে বেলি ড্যান্স করছেন কলেজে, তৃণমূল রাজ্যের কলেজগুলিকে বার বানিয়ে ফেলেছে।”
এই পরিস্থিতিতে কলেজ প্রশাসন দায় এড়ালেও, ঘটনাটি ঘিরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ এবং শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের ভূমিকায় নতুন করে প্রশ্ন উঠছে। তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—এই নাচ সত্যিই শুধু এক বিবাহবার্ষিকীর মঞ্চে, না কি কলেজের পর্দার আড়ালে আরও কিছু লুকিয়ে আছে?