উত্তরপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিক ফের একবার খবরের শিরোনামে। কলকাতার স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে গিয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠল তাঁর বিরুদ্ধে (Kanchan Mullick)। বুধবার দুপুরে এই ঘটনার জেরে গোটা হাসপাতাল চত্বরে উত্তেজনা ছড়ায়। অভিযোগ, চিকিৎসকের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন কাঞ্চন। এমনকি হুমকিও দেন বলে দাবি চিকিৎসক এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। শেষে রোগী ও তাদের পরিজনের প্রতিবাদের মুখে ট্রপিক্যাল ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হন বিধায়ক (Kanchan Mullick)।
ঘটনার সূত্রপাত দুপুর ১টা ৫০ মিনিট নাগাদ। কাঞ্চন মল্লিক (Kanchan Mullick) তাঁর ৮৬ বছরের শাশুড়িকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ট্রপিক্যালে যান। তাঁর অভিযোগ, বহুক্ষণ অপেক্ষার পরেও চিকিৎসক রোগী দেখছেন না। যদিও চিকিৎসকের দাবি, তিনি (Kanchan Mullick) তখন একটি শিশুর চিকিৎসা করছিলেন, তারপরই অন্য রোগীদের দেখার কথা ছিল। কিন্তু বিধায়ক তাঁকে চাপ দিতে থাকেন এবং সঙ্গে সঙ্গে রোগী দেখা শুরু করতে বলেন।
চিকিৎসক মেহবাবুর রহমানের দাবি, বিধায়ক (Kanchan Mullick) তাঁকে ব্যক্তিগত প্রশ্ন ছুঁড়ে হুমকি দেন— “আপনার নাম কী? রেজিস্ট্রেশন নম্বর কী? আপনাকে ট্রান্সফার করে দেব!” এই আচরণে হতবাক হয়ে পড়েন চিকিৎসক। ঘটনাস্থলে উপস্থিত রোগীরা এবং তাঁদের পরিজনেরা এর প্রতিবাদ করেন। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছায় যে কাঞ্চন মল্লিককে হাসপাতাল ছাড়তে হয়।
ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডাক্তার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে দেবার্ঘ্য মুখোপাধ্যায় জানান, জনপ্রতিনিধি হিসেবে কাঞ্চন মল্লিকের (Kanchan Mullick) কাছ থেকে এমন ব্যবহার কাম্য নয়। “উনি এসে উল্টোপাল্টা কথা বলেন, গালিগালাজ করেন— আমরা এর তীব্র নিন্দা করি,” বলেন তিনি।
তবে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কাঞ্চন মল্লিক। তাঁর বক্তব্য, “শাশুড়িমাকে টিকিট কেটে নিয়ম মেনেই দেখাতে গিয়েছিলাম। শুধু প্রেসারটা দেখে দেবেন কিনা, এই প্রশ্ন করতেই ডাক্তারবাবু উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করেন। আমার স্ত্রীও প্রশ্ন করেন ওষুধ বন্ধ করা হবে কি না, তখনও ওনার ব্যবহার যথেষ্ট খারাপ। আমি শুনছি হাতাহাতির কথা— এ সব ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার।”
এই ঘটনার পর মুখ খুলেছেন রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা। তিনি বলেন, “একজন জনপ্রতিনিধির আচরণে শালীনতা থাকা উচিত। চিকিৎসকের সঙ্গে এমন ব্যবহার মেনে নেওয়া যায় না।”
ঘটনার পর চিকিৎসক মেহবাবুর রহমান লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি বলেন, “আমি কোনও দুর্ব্যবহার করিনি। ওঁর ব্যবহারেই আমার খারাপ লেগেছে। কেন এমন করলেন, বুঝিনি।”
স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের সুপার শুভাশিস কমল গুহ জানিয়েছেন, তিনি স্বাস্থ্য দফতরে গোটা বিষয়টি রিপোর্ট করেছেন। এই ঘটনার জেরে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন উঠছে— জনপ্রতিনিধির পরিচয় কি হাসপাতালের নিয়ম ভাঙার ছাড়পত্র?