আপনি কি কখনও মাঝরাতে ঘেমে উঠেছেন দুঃস্বপ্ন দেখে? তাহলে হতে পারে আপনার রাতের খাবারের চিজ (Cheese)-পিজ্জাটাই ছিল আপনার ঘুমের সবচেয়ে বড় শত্রু! বহুদিন ধরেই চিজ ও দুঃস্বপ্নের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে বিতর্ক চলেছে। এমনকি চার্লস ডিকেন্সের বিখ্যাত চরিত্র এবেনেজার স্ক্রুজ পর্যন্ত তাঁর ভয়ঙ্কর স্বপ্নের জন্য দায়ী করেছিলেন “চিজের কণা” (Cheese) ও রাতের খাবারকে। এবার একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এল চমকপ্রদ তথ্য—চিজ সত্যিই দুঃস্বপ্ন ডেকে আনতে পারে!
চিজ-ক্র্যাকার শুধু ক্যালোরি নয়, ঘুমও ছিনিয়ে নিচ্ছে!
‘Frontiers in Psychology’ জার্নালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় জানা গেছে, খাবার শুধুমাত্র শরীরের ওজন বা বৃদ্ধি নয়, ঘুমের উপরও বড় প্রভাব ফেলে। ১০০০ জনেরও বেশি অংশগ্রহণকারীর উপর পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, ৪০.২ শতাংশ মানুষ স্বীকার করেছেন যে নির্দিষ্ট কিছু খাবার তাদের ঘুম বা স্বপ্নকে প্রভাবিত করে। ৩১ শতাংশ অংশগ্রহণকারী দায়ী করেছেন মিষ্টি বা ডেজার্টকে (Cheese), আর ২২ শতাংশ দোষ দিয়েছেন দুগ্ধজাত পণ্যের দিকে—যার মধ্যে চিজ শীর্ষে (Cheese)।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, অধিকাংশ মানুষ যারা চিজ খাওয়ার পর দুঃস্বপ্ন দেখার অভিযোগ করেছেন, তারা ছিলেন ল্যাকটোজ ইনটলারেন্ট। এই বিষয়ে গবেষণার প্রধান লেখক, মন্ট্রিয়ালের Université de Montréal-এর ড. টোর নিলসন বলেন, “ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স এবং অন্যান্য ফুড অ্যালার্জির সঙ্গে দুঃস্বপ্নের সম্পর্ক অত্যন্ত শক্তিশালী। খাওয়ার অভ্যাসে সামান্য পরিবর্তন এনে এই দুঃস্বপ্ন কমানো যেতে পারে।”
সব চিজ এক নয়—বিপদের মূল ‘টাইরামিন’
লিলাবতী হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ চিকিৎসা বিভাগের ড. পুষ্কর শিকারখানে জানান, “চিজ, বিশেষ করে পুরনো বা ফার্মেন্টেড ধরনের চিজ যেমন চেডার, ব্লু চিজ বা ক্যামেম্বার্ট, এতে টাইরামিন নামক অ্যামিনো অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি থাকে। টাইরামিন মস্তিষ্ক ও অ্যাডরিনাল গ্ল্যান্ডকে উত্তেজিত করে, যার ফলে শরীর ফাইট-অর-ফ্লাইট মোডে চলে যায় এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।”
তবে হালকা ধরনের চিজ যেমন মজারেলা বা ছানার চিজ (কটেজ চিজ) সাধারণত তুলনামূলকভাবে নিরাপদ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
কেবল চিজ নয়—আপনার প্রিয় হট চকোলেটও দায়ী হতে পারে!
‘হান্না মন্টানা’ শো-র সেই বিখ্যাত পর্ব মনে আছে? যেখানে মাইলি সাইরাস রাতে হট চকোলেট খেয়ে দুঃস্বপ্নে ভোগে? গবেষকরা বলছেন, চিজ (Cheese) ছাড়াও ডেজার্ট, মিষ্টি, চকলেট ইত্যাদিও ঘুমের বড় শত্রু হতে পারে।
CARE Hospitals, হায়দরাবাদের ডাঃ রাহুল আগরওয়াল জানিয়েছেন, “রাতের খাবারে অতিরিক্ত মিষ্টি বা ফ্যাটি খাবার খাওয়ায় রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ে ও হজম ব্যাহত হয়। এর ফলে ঘন ঘন ঘুম ভাঙে, খারাপ স্বপ্ন হয় ও ঘুমের গুণমান খারাপ হয়।”
শুধু খাবার নয়, লাইফস্টাইল ও স্বাস্থ্যজনিত সমস্যাও দুঃস্বপ্নের কারণ হতে পারে। যেমন, অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার (OSA) ক্ষেত্রেও খারাপ স্বপ্ন হতে পারে। এর সাধারণ লক্ষণ হলো জোরে নাক ডাকা।
দুঃস্বপ্ন এড়াতে কী করবেন? বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ:
- খাবার ও ঘুমের মধ্যে কমপক্ষে ২–৩ ঘণ্টার ব্যবধান রাখুন।
- রাতের খাবারে ভারী, মশলাদার খাবার, চিজ বা ডেজার্ট পরিহার করুন।
- হালকা স্ন্যাকস হিসেবে কলা বা বাদাম খেতে পারেন।
- চা, কফি, হট চকোলেট সন্ধ্যার পর পরিহার করুন।
- ডায়াবেটিকরা প্রোটিন, সবজি ও হোল গ্রেইনের ব্যালান্সড খাবার খান।
- সারা দিন জল খান, তবে শোওয়ার আগে অতিরিক্ত পানি পান এড়িয়ে চলুন।
- রাত ১১টার মধ্যে ঘুমোতে যাওয়া সবচেয়ে ভালো।
গবেষকরা বলছেন, এই বিষয়টি নিয়ে আরও বিস্তৃত গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে, বিশেষত বিভিন্ন বয়স, জীবনধারা ও সংস্কৃতির মানুষের উপর ভিত্তি করে।