Shopping cart

TnewsTnews
  • Home
  • All
  • বিশ্বাসঘাতকতা দিয়ে বাজিমাত! প্রাইম ভিডিওর এই রিয়েলিটি শো বদলে দিচ্ছে সব নিয়ম
All

বিশ্বাসঘাতকতা দিয়ে বাজিমাত! প্রাইম ভিডিওর এই রিয়েলিটি শো বদলে দিচ্ছে সব নিয়ম

the traitor
Email :4

যেখানে ভারতীয় রিয়েলিটি শো মানেই ঝগড়া, কান্নাকাটি আর সস্তা নাটক, ঠিক সেই জায়গাতেই চুপিচুপি ধরা দিয়েছে এক ভিন্নস্বাদের শো—‘The Traitors’। অ্যামাজন প্রাইম ভিডিও-র এই গেম বেইসড রিয়েলিটি শো এখন ভারতীয় দর্শকের মন জয় করে নিয়েছে তার তীক্ষ্ণ মনস্তাত্ত্বিক খেলা, রহস্য আর বিশ্বাসঘাতকতার অসাধারণ মোড়কে (The Traitors)।

‘Bigg Boss’ দেখে অভ্যস্ত দর্শকদের কাছে ‘The Traitors’ যেন স্বাভাবিক এক পরবর্তী ধাপ। ‘Bigg Boss’-এ যেখানে ভালোবাসা, আবেগ আর জনপ্রিয়তার উপর নির্ভর করে টিকে থাকা, সেখানে ‘The Traitors’-এ টিকে থাকার জন্য প্রয়োজন কৌশল, মিথ্যা, এবং চতুরতা। আর মজার বিষয় হলো, ভারতীয় দর্শক এই পরিবর্তনকে গলা টিপে ধরেছে।

খেলার নিয়মটা সরল হলেও ভিতরে লুকিয়ে আছে জটিলতা। প্রতিযোগীদের দুই দলে ভাগ করা হয়—‘Traitors’ এবং ‘Faithfuls’। ‘Traitors’-রা গোপনে ‘হত্যা’ করে একে একে ‘Faithfuls’-দের। আর বাকি নিরীহরা চেষ্টা করে বুঝে নিতে, কে বিশ্বাসঘাতক! প্রতিদিনের খেলায় তৈরি হয় সন্দেহ, ষড়যন্ত্র আর এক অদ্ভুত মানসিক চাপ।

এই শো-এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো—এখানে সত্য বলা কোনো গুণ নয়, বরং মিথ্যা বলে টিকে যাওয়াই সফলতা। ভারতীয় রিয়েলিটি শো-তে এতদিন ‘সত্যবাদী’, ‘সংগ্রামী’, ‘ইমোশনাল’ চরিত্রদেরকেই হিরো বানানো হয়েছে। কিন্তু এই শো সেটা ভেঙে দিয়ে দেখাচ্ছে—মিথ্যাবাদীরাও হতে পারে নায়ক!

আন্তর্জাতিক কনটেন্টের সঙ্গে পরিচয় ও অভ্যস্ততাই এই পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি। ‘The Traitors’ আগে থেকেই বিশ্বের নানা দেশে সুপারহিট। এবার সেই ফর্ম্যাটে ভারতীয় ছোঁয়া মিশে তৈরি হয়েছে এক দুর্দান্ত মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ।

এই শো-এর কেন্দ্রে আছে কিছু অপ্রচলিত মুখ—ইউটিউবার পুরব ঝা এবং ইনস্টাগ্রাম সেনসেশন অপরূপা মুখিজা ওরফে রেবেল কিড। তাঁরা শুধু প্রতিযোগী নন, তাঁরা এই প্রজন্মের প্রতিচ্ছবি।

পুরব ঝা, শো-এর অন্যতম বিশ্বাসঘাতক চরিত্র, নিজের বন্ধুদের পর্যন্ত ঠকিয়ে এগিয়েছেন গেমে। চতুর বুদ্ধি, কটাক্ষপূর্ণ মন্তব্য আর ঠান্ডা মাথার ষড়যন্ত্র তাঁকে করে তুলেছে দর্শকের প্রিয়। তিনি হয়তো খলনায়ক, কিন্তু ভালোবাসা পেয়েছেন নায়কের মতোই।

অপরূপা মুখিজা—সাহসী, স্পষ্টবাদী ও বুদ্ধিমতী। প্রতিদ্বন্দ্বীদের চোখে চোখ রেখে সত্য বলে দিয়েছেন। ট্রেইটারদের ধরতে তাঁর প্রচেষ্টা শুধু সহ-প্রতিযোগীদের নয়, বিচারক করণ জোহর পর্যন্ত প্রশংসা করেছেন। বিতর্ক সত্ত্বেও তিনি ‘ক্যান্সেল’ হননি, বরং উদযাপিত হচ্ছেন তাঁর গেমপ্লের জন্য।

এই প্রজন্মকে তাঁরা শেখাচ্ছেন—ভালোমানুষ না হয়ে কৌশলী হওয়া যায়, জিততে গেলে কখনো কখনো প্রতারণা করতে হয়। তাঁরা দেখাচ্ছেন, সাফল্য আসতে পারে সোজাসাপ্টা পথে নয়, ঘুরপথেও।

যেখানে একসময় ‘সত্য’ আর ‘ন্যায়’-এর গল্প শুনে বড় হয়েছে ভারতীয় সমাজ, এখন ‘The Traitors’-এর মতো শো দেখিয়ে দিচ্ছে—বেঁচে থাকার লড়াইয়ে সৎ থাকাই শেষ কথা নয়।

আর এর প্রতিফলন মিলছে বাস্তব জীবনেও। প্রতিযোগিতামূলক চাকরি, অনলাইন ফেম, কিংবা পড়াশোনার রেষারেষি—সবকিছুতেই এখন প্রয়োজন স্মার্টনেস। আর সেই বাস্তবতা স্ক্রিনে দেখে দর্শক বলছেন, “এটাই তো আমার গল্প!”

‘Bigg Boss’ যেখানে হট্টগোল, চিৎকার, আর আবেগের খেলা, ‘The Traitors’ সেখানে মাথার খেলা। কম কথা, বেশি স্ট্র্যাটেজি।

এরই মধ্যে দ্বিতীয় সিজনের ঘোষণা হয়েছে। দর্শক বুঝিয়ে দিয়েছে—এখন শো চলবে কনসেপ্ট দিয়ে, বাজেট দিয়ে নয়। বিশ্বাসঘাতকতা, ষড়যন্ত্র আর মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েন—এটাই নতুন বিনোদনের ভাষা।

শেষ পর্যন্ত কে জিতবে তা নিয়ে রোমাঞ্চ থাকলেও, একথা স্পষ্ট—‘The Traitors’ আমাদের সমাজে সত্য-মিথ্যার সংজ্ঞা বদলে দিচ্ছে। এখন যারা জাল বুনতে জানে, তারাই বাঁচে, তারাই নায়ক।

আজ ৩ জুলাই, ‘The Traitors’-এর ফিনালের দিন, কিন্তু যেই জিতুক না কেন, জয় হচ্ছে এক নতুন বাস্তবতার—যেখানে জিততে গেলে সৎ হওয়া জরুরি নয়।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Posts