রাজনীতিতে যেন ইঙ্গিতের ভাষাই সবচেয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে কখনও কখনও। বৃহস্পতিবার প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে তেমনই এক অনন্য মেজাজে ধরা দিলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। প্রতিদিনের মতোই সকালে রাস্তায় হাঁটতে দেখা গেল তাঁকে। তবে আজ ছিল চমক— হাতে ছিল একটি ডুগডুগি। হ্যাঁ, রীতিমতো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ডুগডুগি বাজিয়ে ঘুরলেন বিজেপি নেতা। মুহূর্তে চোখ পড়ে গেল জনতার, ক্যামেরার। প্রশ্ন উঠল— এই ডুগডুগির শব্দ কি নিছক শ্রাবণ মাসের ধার্মিক আবহ, না কি এর পিছনে লুকিয়ে আছে আরও গভীর রাজনৈতিক বার্তা (Dilip Ghosh)?
বুধবারই বিজেপির রাজ্য রাজনীতিতে বড়সড় পরিবর্তন এসেছে। দলের নতুন রাজ্য সভাপতি হয়েছেন রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য। একসময় দিলীপ ঘোষই (Dilip Ghosh) ছিলেন সেই পদে— এবং তাঁর নেতৃত্বেই রাজ্যে বিজেপির আসন সংখ্যা একসময় শিখরে পৌঁছেছিল। কিন্তু সময় বদলেছে। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে দলের ফল হতাশাজনক হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরেই সাংগঠনিক কাজ থেকে একপ্রকার দূরে দিলীপ (Dilip Ghosh)। তাঁকে দেখা যায়নি প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচিতে, অনুপস্থিত থেকেছেন অমিত শাহের সভাতেও। সদ্য বিবাহিত দিলীপ ঘোষ এখন যেন ধীরে ধীরে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন কেন্দ্রবিন্দু থেকে।
এই আবহেই জল্পনা চলছিল, আবার কি রাজ্য সভাপতির পদে ফিরবেন দিলীপ? কিন্তু সব জল্পনায় জল ঢেলে নেতৃত্ব দিয়েছে শমীক ভট্টাচার্যকে। আর ঠিক তার পরদিনই ডুগডুগি হাতে রাস্তায় নামলেন দিলীপ। মিষ্টি মুখ করে শুরু, তারপর বাজতে থাকল ডুগডুগি— যেন নীরব এক প্রতিবাদ!
সাংবাদিকরা প্রশ্ন করতেই রহস্য রাখলেন বজায়। দিলীপ বললেন, “বর্তমান পরিস্থিতির কারণে সবাইকে জাগাচ্ছি।” কোন পরিস্থিতি? কাকে জাগাতে চাইছেন? জবাব দিলেন ধীরে, খানিক কাব্যিক ভঙ্গিতে— “শ্রাবণ মাস চলছে। প্রভু মহাদেব চারদিকে ডুগডুগি বাজান, তাঁর হাতে থাকে ডমরু— সেই শব্দে জাগে বিশ্ব। আমিও সেই পথেই, সবাইকে জাগাতে এসেছি। আসুন, লড়াই করুন!”
এই ‘লড়াই’-এর ডাক কি দলের অন্দরেই বিদ্রোহের সুর? নাকি রাজ্য রাজনীতির শূন্যতা পূরণে ফের সক্রিয় হওয়ার সংকেত? মুখে না বললেও, ডুগডুগির প্রতিটি শব্দ যেন বলছে— দিলীপ এখনও থামেননি। তিনি ‘জাগাতে’ জানেন, সময় এলেই নাড়াতেও পারেন।