তিব্বতের ধর্মগুরু দলাই লামার (Dalai Lama) ভবিষ্যৎ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে জল্পনা চলছিল। অবশেষে তাঁর নিজের মুখেই মিলল উত্তর। জীবদ্দশাতেই দলাই লামা জানিয়ে দিলেন, তাঁর প্রয়াণের পরও দলাই লামার (Dalai Lama) ঐতিহ্য বজায় থাকবে। ছ’শো বছরের পুরনো এই প্রথা থেমে যাবে না। তাঁর স্পষ্ট ঘোষণা— ভবিষ্যতেও বাছাই করা হবে নতুন দলাই লামা। সেই দায়িত্ব থাকবে একমাত্র ‘গাদেন ফোদ্রাং ট্রাস্ট’-এর হাতে (Dalai Lama)।
এই ঘোষণার জেরে রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বিশেষত চিন এই ঘোষণায় কার্যত তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠেছে। কারণ, দলাই লামা(Dalai Lama) প্রশ্নে বহুদিন ধরেই ভারতের সঙ্গে চিনের টানাপোড়েন রয়েছে। তিব্বতের স্বাধীনতা এবং দলাই লামার অবস্থান নিয়ে দুই দেশের অবস্থান ভিন্ন মেরুতে। তাই তাঁর এই ঘোষণা যে চিনকে চাপে ফেলেছে, তা বলাই বাহুল্য।
চলতি ৬ জুলাই, দলাই লামা (Dalai Lama) ৯০ বছরে পা দেবেন। জন্মদিনের ঠিক আগে এই বড়সড় ঘোষণাটি তিনি নিজে করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে, বিশেষত মঙ্গোলিয়া, রাশিয়া ও চিনে থাকা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছ থেকে গত ১৪ বছরে বহু অনুরোধ এসেছে, যাতে এই ঐতিহ্যবাহী প্রথা বন্ধ না হয়। সেই আবেদনের ভিত্তিতেই এবার তিনি জানিয়ে দিলেন, তাঁর মৃত্যুর পরও দলাই লামার বাছাই হবে— ঠিক যেমনটা হয়ে এসেছে শতাব্দীর পর শতাব্দী।
তাঁর আসল নাম তেনজিং গ্যাতসো। তিনিই ১৪তম দলাই লামা। অহিংসা, প্রেম, সহমর্মিতা ও মানবতার প্রতীক হিসেবে তাঁকে শ্রদ্ধা করে থাকেন বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। তিনি নিজেও বারবার বলেছেন, দলাই লামার পুনর্জন্ম ও বাছাই শুধুমাত্র বৌদ্ধ সমাজের ভাবনার উপর নির্ভর করে, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ সেখানে অনুচিত।
এদিকে চিনের বক্তব্য, দলাই লামার পুনর্জন্ম বা নতুন বাছাই— সবই হবে সরকারি অনুমোদনের ভিত্তিতে। চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মাও নিং এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “দলাই লামা, পাঞ্চেন লামা বা অন্য বৌদ্ধ নেতাদের পুনর্জন্ম হবে ‘সোনার পাত্র’-এ থাকা নামের মধ্য থেকে, যা বাছাই করা হবে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমতিতেই।”
তবে দলাই লামার এই স্পষ্ট বার্তা বুঝিয়ে দিল, রাজনৈতিক চাপের কাছে মাথা নত নয়, বরং বৌদ্ধ ধর্মের হাজার বছরের ঐতিহ্য বজায় রাখাই তাঁর লক্ষ্য। এখন দেখার, এই ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক মহল কী অবস্থান নেয়, এবং চিন এর জবাবে কতটা কঠোর হয়।