মার্কিন রাজনীতিতে ফের জাতপাত, সংস্কৃতি ও বর্ণবিদ্বেষ ঘিরে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। ভারতীয় বংশোদ্ভূত নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র প্রার্থী এবং ডেমোক্র্যাট নেতা জোহরান মামদানি ( Zohran Mamdani) একটি পুরনো ভিডিওতে হাতে ভাত খাওয়ার দৃশ্য প্রকাশ্যে আসতেই, রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ব্র্যান্ডন গিল এক বিতর্কিত মন্তব্য করে বসেন। তিনি টুইটারে লেখেন—”আমেরিকার সভ্য মানুষেরা ( Zohran Mamdani) এমনভাবে খায় না। যদি পশ্চিমা রীতি না মানো, তাহলে ফিরে যাও তৃতীয় বিশ্বে।”
টেক্সাসের এই কংগ্রেসম্যানের এমন মন্তব্য ঘিরে রীতিমতো আগুন লেগে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় ( Zohran Mamdani)। প্রচুর মানুষ তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন এবং তাকে ‘দ্বিচারী’ বলেও কটাক্ষ করেন। নেটিজেনরা তুলে আনেন গিলের শ্বশুর তথা ডানপন্থী রাজনৈতিক ভাষ্যকার দিনেশ ডি’সুজার পুরনো ছবি, যেখানে তাকেও হাতে খেতে দেখা যায় ( Zohran Mamdani)। একজন লিখেছেন—“এই দেখুন আপনার শ্বশুরমশাই, যিনি ‘সভ্য’ হয়েও এমন ‘তৃতীয় বিশ্বের মতো’ খাচ্ছেন!”
একজন ইউজার তো প্রশ্ন করে বসেন, “তাহলে আপনি টাকো, বার্গার বা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই কী দিয়ে খান? ফর্ক দিয়ে লেস খান নাকি?”
আরও একজন ছবি পোস্ট করে লেখেন—”নিজে হটডগ খেয়ে আঙুল চাটেন, আগে আপনাকেই তৃতীয় বিশ্বে পাঠানো উচিত। ( Zohran Mamdani)”
এই নিয়ে মুখ খোলেন গিলের স্ত্রী ড্যানিয়েল ডি’সুজা গিল, যিনি নিজেও ভারতীয় বংশোদ্ভূত। তিনি স্বামীর মন্তব্যকে সমর্থন করে বলেন, “আমি আমেরিকায় জন্মেছি, আমি খ্রিস্টান MAGA দেশপ্রেমিক। আমি চিরকাল ছুরি-কাঁটা দিয়েই খেয়েছি। আমার বাবার আত্মীয়রা ভারতেই থাকেন, তারাও খাওয়ার সময় ফর্ক ব্যবহার করেন।”
অন্যদিকে, ডেমোক্র্যাট নেতা মামদানির ( Zohran Mamdani) হয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় হাজার হাজার মানুষ সরব হন। অনেকেই জানান, দক্ষিণ এশিয়াসহ বহু অঞ্চলে হাতে খাওয়া একটি স্বাভাবিক ও সাংস্কৃতিক দিক। একজন লিখেছেন, “আপনি যেটাকে সভ্যতা ভাবছেন, সেটা পশ্চিমা সংস্কৃতির চশমা দিয়ে দেখা। বাকিদেরও কি বাঁচার অধিকার নেই?”
এই বিতর্ক চরমে পৌঁছে যায় যখন মামদানির ওপর ব্যক্তিগত আক্রমণ শুরু করেন বিতর্কিত MAGA অ্যাক্টিভিস্ট লরা লুমার। তিনি লেখেন, “একজন ইসলামপন্থী ও কমিউনিস্ট হওয়া যথেষ্ট ছিল তাকে না ভোট দেওয়ার জন্য। সে আফ্রিকা থেকে এসেছে, আর তার খাওয়ার ধরনেই সেটা বোঝা যায়। আমার কুকুররাও ওর চেয়ে পরিষ্কারভাবে খায়।”
লুমার আরও লেখেন, “সে ডান হাতে খায়, কিন্তু বাম হাত দিয়ে কী করে তা আমরা জানি—এটাই তো ‘তৃতীয় বিশ্বের’ ব্যাপার। আপনি ওর কোনও হাতই ধরতে চাইবেন না।”
তিনি মামদানিকে “নেপো বেবি” বলেও কটাক্ষ করেন, দাবি করেন যে মামদানি ( Zohran Mamdani) বিলিয়নেয়ারদের বিরুদ্ধে মুখ খুললেও বাস্তবে নিজের মা মীরা নায়ারের চেলসির ২ মিলিয়ন ডলারের কন্ডোতেই থাকেন।
উল্লেখ্য, মামদানি সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক সিটির ডেমোক্র্যাট প্রাইমারিতে অ্যান্ড্রু কুয়োমোকে হারিয়ে চমকে দিয়েছেন রাজনৈতিক মহলকে। এই জয়ের পর থেকেই রিপাবলিকানদের টার্গেট হয়ে উঠেছেন তিনি। এমনকি ডোনাল্ড ট্রাম্প পর্যন্ত হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, মামদানি যদি “লাইন মেনে না চলে”, তাহলে নিউ ইয়র্ক সিটির জন্য কেন্দ্রীয় তহবিল বন্ধ করে দেওয়া হবে।
২০২৩ সালে Uncivilised Media-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে মামদানি বলেছিলেন, “যখন আপনি তৃতীয় বিশ্বের কোনো দেশে বড় হন, তখন আপনি ফিলিস্তিনের সংগ্রামটিকে সহানুভূতি ও সংহতির চোখে দেখেন।” এই ভিডিও থেকেই হাত দিয়ে খাওয়ার দৃশ্য ভাইরাল হয়।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মার্কিন রাজনীতিতে সংস্কৃতি, অভিবাসন ও বিভাজনের নতুন বিতর্ক আবার সামনে এসেছে। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতিক্রিয়া থেকেই স্পষ্ট, ‘হাত দিয়ে খাওয়া’ শুধু খাবারের বিষয় নয়—এটা সংস্কৃতি, পরিচয় ও গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নও বটে।