কালীগঞ্জের (Nadia) বোমা বিস্ফোরণে মর্মান্তিকভাবে নিহত ছোট্ট তামান্না খাতুনের পরিবার এখনও শোকের সাগরে ভাসছে। কেবলমাত্র ক্লাস ফোরে পড়ত মেয়েটি। রাজনৈতিক হিংসার বলি হয়ে অকালে ঝরে গেল তার প্রাণ (Nadia) । সোমবার, সেই খুন হওয়া মেয়ের বিচার চেয়ে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর সামনে কেঁদে ফেললেন তামান্নার মা, সাবিনা বিবি। বারবার বললেন, তাঁর মেয়েকে যারা হত্যা করেছে, তাদের যেন ফাঁসি হয়। তাঁর অভিযোগ, তাঁরা সিপিএম করেন বলে এবং তৃণমূলকে ভোট না দেওয়ায় তাঁদের বাড়ির দিকে বোমা ছোড়া হয়। এই মুহূর্তে তাঁরা আবার নতুন করে প্রাণনাশের হুমকির (Nadia) মুখে পড়েছেন বলেও সাবিনা জানান।
গত ২৩ জুন কালীগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচনের ফল প্রকাশের পর জয় উদ্যাপনে মেতে ওঠে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস (Nadia) । সেই সময়ই এলাকায় ছোড়া হয় একাধিক বোমা। তার মধ্যে একটি বোমা গিয়ে পড়ে তামান্নার গায়ে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় শিশু তামান্নার। এই নির্মম ঘটনায় রাজ্যজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। বিরোধীরা শাসকদলের বিরুদ্ধে লাগাতার তোপ দাগছে।
সোমবার বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু তামান্নার বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। মুর্শিদাবাদের বড় চাঁদঘর গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার মোলান্দি গ্রামে তামান্নার বাড়িতে গিয়ে বিমানবাবু সব কিছু শোনেন। মেয়েকে হারানোর যন্ত্রণায় ভেঙে পড়েন সাবিনা বিবি। তিনি অভিযোগ করেন, এখন তাঁদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে — ফোনে বার্তা পাঠিয়ে বলা হচ্ছে, “তোকে এবার মেরে ফেলব, তোর বরকেও মারব।” প্রশাসনকে জানানো হলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি বলে তাঁর দাবি। তিনি বলেন, “আমাদের এখন আর হারানোর কিছু নেই। যাকে সবচেয়ে ভালোবাসতাম, তাকে ওরা কেড়ে নিয়েছে। এখন বেঁচে থেকে কী করব?”
তামান্নার মা ও পরিবারের বক্তব্য শুনে বিমান বসু জানান, তারা ন্যায়বিচার চাইলেও সেটাই এখন সবচেয়ে অনিশ্চিত। তিনি বলেন, “ওঁরা ২৪ জনের নাম দিয়েছেন। মাত্র ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অথচ বাকিদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই আরও তথ্য মিলত। কিন্তু মূল অভিযুক্তকে এখনও ধরা হয়নি। পুলিশ বলছে, সে নাকি এলাকায় নেই!”
তবে এখানেই থামেননি বিমান বসু। কালীগঞ্জে জমিতে মজুত শত শত বোমা উদ্ধারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিনি পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। বলেন, “তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা পাঠ জমিতে শয়ে শয়ে বোমা রেখে দিয়েছিল। সেগুলি পুলিশ উদ্ধার করেনি। সাধারণ মানুষ নিজেরাই উদ্ধার করেছে। অথচ পুলিশ বলছে, তারা কিছু জানে না। উল্টে সাধারণ মানুষ কেন বোমা উদ্ধার করল, সেটাই প্রশ্ন করছে। এটা কেমন বিচারব্যবস্থা?”
এই ঘটনায় রাজনৈতিক চাপানউতোর চরমে পৌঁছেছে। তামান্নার মৃত্যু শুধু এক শিশুর প্রাণহানি নয় — এটি রাজ্যের রাজনৈতিক সহিংসতা ও আইনের শাসনের বাস্তব চিত্র বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এখন দেখার, নিহত শিশুর পরিবারের এই বিচার চাওয়ার আর্তিকে কতটা গুরুত্ব দেয় রাজ্য প্রশাসন।