সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজে ছাত্রী গণধর্ষণের (Kasba Case) ঘটনার জেরে রাজ্যজুড়ে শোক ও ক্ষোভের আবহে তৃণমূলের দুই প্রবীণ নেতা— সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিধায়ক মদন মিত্রের মন্তব্য ঘিরে দানা বাঁধছে তীব্র বিতর্ক (Kasba Case) । দলের পক্ষ থেকে তাঁদের মন্তব্য প্রকাশ্যে ‘ব্যক্তিগত মতামত’ বলে দায় এড়ানো হলেও, ওই দুই নেতা নিজেদের অবস্থান থেকে এক চুলও সরতে নারাজ। বরং সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের বক্তব্য ব্যাখ্যা করে দলকেই যেন একপ্রকার অস্বস্তিতে ফেললেন তাঁরা।
ঘটনার সূত্রপাত মদন মিত্রের এক মন্তব্য থেকে। কসবা কাণ্ডে (Kasba Case) দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি তুললেও, তিনি বলেন, “উনি যখন যাচ্ছিলেন সেই সময় যদি সঙ্গে করে আরও দুই বন্ধুকে নিয়ে যেতেন বা কাউকে জানাতেন, এটা ঘটত না। যাঁরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তাঁরা তো সুযোগেরই ব্যবহার করেছেন।” এই বক্তব্য (Kasba Case) ঘিরেই শুরু হয় প্রবল সমালোচনা। অনেকেই একে ‘ভিক্টিম ব্লেমিং’ হিসেবে দেখছেন। বিতর্ক যখন তুঙ্গে, তখন তৃণমূল কংগ্রেস নিজেদের অফিসিয়াল সোশ্যাল মিডিয়া পেজে সাফ জানিয়ে দেয়— এই বক্তব্য দল কোনওভাবেই সমর্থন করে না।
পোস্টে লেখা হয়, “সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজে ঘটে যাওয়া নৃশংস ঘটনা প্রসঙ্গে সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিধায়ক মদন মিত্র যে মন্তব্য করেছেন, তা তাঁদের ব্যক্তিগত মত। দল তাঁদের বক্তব্যের সঙ্গে কোনওভাবেই একমত নয় এবং এই মন্তব্যগুলিকে কড়াভাবে নিন্দা করছে।”

তবে দলের এই অবস্থান মেনে নিতে নারাজ বিতর্কিত দুই নেতা। মদন মিত্র ফেসবুকে লেখেন, “আমার বক্তব্যের ভুল বয়ান করা হচ্ছে। যারা তা করছে, তারা দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চাইছে।” তিনি জানান, নিজের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এমন কিছু বলেননি বা করেননি, যা জনগণের চোখে অপছন্দনীয় হতে পারে। দলের তরফে প্রকাশিত বিবৃতি সম্পর্কে তিনি বলেন, “দলের বক্তব্য পড়েছি। দলের উচ্চ নেতৃত্বের কাছে অনুরোধ করছি, আমার বক্তব্য যেন ভুলভাবে না বোঝা হয়।” প্রয়োজনে তদন্তের মুখোমুখি হতেও তিনি প্রস্তুত বলে জানান মদন।
একই পথে হেঁটেছেন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মন্তব্য— “একজন বন্ধু যদি বান্ধবীকে ধর্ষণ করে, তাহলে নিরাপত্তা কীভাবে দেবে? কলেজের ভিতরে যদি এমন কিছু ঘটে, সেখানে পুলিশ কীভাবে থাকবে?”
এই বক্তব্যকেও নারীবিদ্বেষী বলেই আক্রমণ করেছেন অনেকে, এমনকি একই দলের সাংসদ মহুয়া মৈত্র-ও নাম না করে তীব্র কটাক্ষ করেছেন। তাঁর মতে, এ ধরনের মন্তব্য লজ্জাজনক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন।
তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রকাশ্য বিরোধিতা সত্ত্বেও দলের দুই প্রবীণ নেতা নিজেদের বক্তব্য থেকে এক পা-ও পিছিয়ে আসেননি। বরং, ফেসবুকে তাঁদের স্পষ্ট বার্তা— তাঁরা ভুল বলেননি, তাঁদের বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে।
ফলে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরেই তৈরি হয়েছে প্রবল চাপানউতোর। রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, এই অবস্থানপত্রে দল আদৌ শেষ কথা বলল, নাকি বড়সড় ফাটলের ইঙ্গিত রেখে দিল রাজনীতির জমিনে?