যখন আন্তর্জাতিক বাজারে অসম চা-এর গুণগত মানের জন্য বিশ্বজুড়ে প্রশংসা চলছে, তখনই ইরান-ইজরায়েল (Iran Israel Tension)সংঘাত একটি বড় সংকট তৈরি করেছে। এর ফলে অসমের ‘অর্থোডক্স চা’ রপ্তানি মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ইরান, যেটি দীর্ঘদিন ধরেই অসমের অন্যতম বৃহৎ ও নির্ভরযোগ্য রপ্তানি বাজার।
অসমে বছরে প্রায় ৮৫ মিলিয়ন কেজি অর্থোডক্স চা উৎপন্ন হয়, যার মধ্যে প্রায় ২৫ মিলিয়ন কেজি ইরানেই যায়—এটি মোট উৎপাদনের প্রায় ৩০ শতাংশ। গোটা ভারতের প্রায় ২৬০ মিলিয়ন কেজি চা রপ্তানির মধ্যে (Iran Israel Tension) অসম একাই ১৪০ মিলিয়ন কেজি রপ্তানি করে। এই পরিসংখ্যানের মধ্যে ইরানের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু চলতি বছরের সংঘাতে এই রপ্তানি রীতিমতো অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। প্রাক্তন টি বোর্ড চেয়ারম্যান প্রভাত বেজবারুয়া বলেছেন, “মধ্যপ্রাচ্যের (Iran Israel Tension) বর্তমান পরিস্থিতিতে ইরান একটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বাজার হয়ে উঠেছে।”
২০২৪ সালে ভারত ইরানে ৩৫ মিলিয়ন কেজি এবং ইরাকে ৪০.৪৭ মিলিয়ন কেজি চা রপ্তানি করেছে। কলকাতা চা নিলামে রপ্তানির পরিমাণ ৫৯ শতাংশ কমেছে, গুয়াহাটি নিলামে কমেছে ৪১ শতাংশ। যুদ্ধ পরবর্তী পরিস্থিতিতে গুয়াহাটি নিলামে প্রতি কেজি চায়ের দাম ২৪ শতাংশ কমে গেছে (Iran Israel Tension) ।

অল ইন্ডিয়া টি এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অংশুমান কানোড়িয়া জানিয়েছেন, ইরানে চা রপ্তানি একটি সরকারি তত্ত্বাবধানে চলে, যেখানে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে রেজিস্ট্রেশন ও পরে অর্থপ্রদান হয়। বর্তমানে বেশ কিছু রপ্তানির অর্থ এখনও পাওয়া যায়নি। জাহাজগুলো এক সপ্তাহ ধরে আটকে রয়েছে।
বর্তমানে অর্ডার থাকলেও ভবিষ্যতের চুক্তি নিয়ে বড় অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। দামও ভয়ানকভাবে পড়ে গেছে। উচ্চ মানের অর্থোডক্স চায়ের দাম যেখানে প্রতি কেজি ৫০–৬০ টাকা বেড়েছিল, এখন তা ১০০ টাকা পর্যন্ত কমে গেছে। এটি চা উৎপাদকদের জন্য আর্থিক দিক থেকে একেবারেই টেকসই নয়।
ইরান নির্ভর বাজারে এই সংকটের কিছু অংশ ইরাক গ্রহণ করলেও, মধ্যমানের চা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমন বহু চা ফেরত এসেছে বা অবিক্রীত থেকে গেছে।
অংশুমান কানোরিয়া জানান, “ইরানের জন্য তৈরি মাঝারি মানের অর্থোডক্স চা এখন ভীষণভাবে বিক্রির বাইরে যাচ্ছে।”
অন্যদিকে, ডাস্ট চায়ের চাহিদা উল্টো রেকর্ড ছুঁয়েছে। কারণ এই চা পুরোপুরি ইউরোপীয় মান অনুযায়ী তৈরি হয়েছে, যেখানে কীটনাশক এবং অবশিষ্ট রাসায়নিকের মাত্রা (MRL) কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত।
এছাড়াও, অসম চা শিল্প আরও একটি বড় সমস্যার সম্মুখীন—আবহাওয়া। চলতি জুন মাসে তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে, যা আদর্শ ৩৫ ডিগ্রির চেয়েও অনেক বেশি। অনিয়মিত বৃষ্টিপাত ফসল চক্রকে ব্যাহত করছে। সঙ্গে রয়েছে উচ্চ উৎপাদন খরচ।
সব মিলিয়ে, অসমের অর্থোডক্স চা শিল্প এক জটিল এবং বহুস্তরীয় সংকটে পড়েছে, যার মূল চালিকা শক্তি আজ রাজনীতি, জলবায়ু এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির ওঠানামা।