১৯৮৪ সালের এক হিমশীতল কাজাখ সকাল। সোভিয়েত মহাকাশযানের ভিতরে ভারতীয় বায়ুসেনার এক তরুণ অফিসার অপেক্ষা করছিলেন এক অজানা গন্তব্যের জন্য। তারপরই শুরু হয় সেই গর্জন। সয়ুজ টি-১১-এর ইঞ্জিন কাঁপিয়ে তোলে চারপাশ। চোখের পলকে পৃথিবীর মায়া ছাড়িয়ে মহাশূন্যে পৌঁছে যান স্কোয়াড্রন লিডার রাকেশ শর্মা—প্রথম ভারতীয়, যিনি পাড়ি দেন মহাকাশে (Shubhanshu Shukla)।
সেই ঐতিহাসিক অধ্যায়ের চার দশক পর আবারও ইতিহাস গড়ল ভারত। এবার ভারতীয় বায়ুসেনার গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা (Shubhanshu Shukla) মহাশূন্যে পাড়ি দিলেন, এবং তিনিই প্রথম ভারতীয় যিনি আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র (ISS)-এ অভিযান চালাচ্ছেন।
শুভাংশুর (Shubhanshu Shukla) জন্ম ১৯৮৫ সালে, রাকেশ শর্মার উড়ানের ঠিক এক বছর পর। ছোটবেলা থেকেই তিনি শুধু আকাশের তারা দেখেননি, বরং সেই তারাদের লক্ষ্য করেই বড় হয়েছেন।
২০২৫ সালের ২৫ জুন ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্পেসএক্সের ফ্যালকন-৯ রকেটে চেপে শুভাংশু শুক্ল (Shubhanshu Shukla) মহাকাশে যাত্রা শুরু করেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও তিনজন মহাকাশচারী, তিনটি ভিন্ন দেশ থেকে। অ্যাক্সিয়াম স্পেসের এই Ax-4 মিশনের অংশ হয়ে তাঁরা চারজনই আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে কাজ ও গবেষণার উদ্দেশ্যে গিয়েছেন।
ফ্যালকন-৯-এর মারলিন ইঞ্জিনে তীব্র গর্জনে শুরু হয় উত্থান। স্পেসএক্সের ড্রাগন মহাকাশযান নির্ভুলভাবে পৃথিবীর কক্ষপথে পৌঁছে যায়, আর তার ফার্স্ট স্টেজ ফিরে আসে নিখুঁত ল্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে ন। এরপর ড্রাগনের সেকেন্ড স্টেজ মহাশূন্যে এগিয়ে যায়—আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে মিলনের নির্ধারিত পথে।
উড্ডয়নের এক ঘণ্টা আগে চার মহাকাশচারী তাঁদের স্পেসস্যুট পরে পরিবারকে বিদায় জানান। শুভাংশুর স্ত্রী (Shubhanshu Shukla) ও সন্তানরা তখন বিদায় জানাচ্ছিলেন তাঁদের ‘পৃথিবী ছেড়ে’ যাওয়া মানুষটিকে।
এই বহু প্রতীক্ষিত উড্ডয়ন হওয়ার কথা ছিল ২৯ মে। কিন্তু প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে, খারাপ আবহাওয়ার কারণে, ISS-এর অবস্থানের কারণে সাতবার পিছিয়ে যায় মিশন। ফলে চার মহাকাশচারীকেই প্রায় এক মাস কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হয়।
অ্যাক্স-৪-এর মিশন কমান্ডার পেগি হুইটসন জানান, “স্পেস মিশনে দেরি হওয়া স্বাভাবিক ঘটনা। আমাদের দল আত্মবিশ্বাসী ও মিশনের জন্য প্রস্তুত।”

এই মুহূর্তে ড্রাগন মহাকাশযান পৃথিবী থেকে ৪০০ কিলোমিটার ওপরে থাকা আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রের দিকে ধেয়ে চলেছে। শুভাংশু শুক্ল, মিশনের পাইলট হিসেবে, কক্ষপথের গতিবিধি এবং ডকিং প্রসেসের ওপর সতর্ক নজর রাখবেন। ড্রাগন মহাকাশযান স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত হলেও, পাইলট হিসেবে তাঁর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্বাবধায়ক ও প্রয়োজনে ব্যাকআপ ম্যানুয়াল অপারেটর হিসেবে।
বায়ুসেনার এই পরীক্ষিত পাইলট মিগ-২১, মিগ-২৯, সুখোই-৩০ এমকেআই, ডর্নিয়ার ও এএন-৩২-এর মতো বহু বিমানে ওড়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে শুভাংশুর। এবার তাঁর নেতৃত্বেই আর এক নতুন অধ্যায় শুরু করল ভারতীয় মহাকাশ অভিযানের ইতিহাস।