অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রিসাইলমের বিখ্যাত মাল্লিকার্জুন স্বামী মন্দিরে এক ঐতিহাসিক আবিষ্কার ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়েছে পুরাতত্ত্ববিদ ও জ্যোতির্বিদদের (Halley’s Comet) মহলে। মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে উদ্ধার হওয়া বিজয়নগর যুগের একটি তাম্রলিপিতে ভারতের ইতিহাসে হ্যালির ধূমকেতু (Halley’s Comet) সংক্রান্ত সবচেয়ে প্রাচীন ও নির্ভরযোগ্য লিখিত উল্লেখ পাওয়া গেছে।
এই তাম্রলিপি ১৪৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২৮ জুন তারিখে বিজয়নগরের রাজা মাল্লিকার্জুন কর্তৃক এক বৈদিক পণ্ডিতকে জমি দান সংক্রান্ত ঘোষণাপত্র। দানসংক্রান্ত বিবরণের পাশাপাশি এতে একটি উজ্জ্বল আকাশে দৃশ্যমান “আলো ছড়ানো অচেনা বস্তু”-র (Halley’s Comet) বর্ণনা রয়েছে, যা গবেষকদের মতে সেই সময় দৃশ্যমান হ্যালির ধূমকেতুকেই বোঝায়।
জ্যোতির্বিজ্ঞানের তথ্য বলছে, ১৪৫৬ সালের গ্রীষ্মে হ্যালির ধূমকেতু (Halley’s Comet) পৃথিবীর আকাশে অত্যন্ত উজ্জ্বলভাবে দেখা গিয়েছিল, ইউরোপ ও এশিয়ার বহু সভ্যতা একে গুরুত্ব দিয়েছিল। ভারতীয় এই তাম্রলিপির উল্লেখ সেই সময়ের সুনির্দিষ্ট তারিখ—শক ১৩৭৮, ধাত্র ঋষি আষাঢ় ব. ১১—যা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে পড়ে ২৮ জুন ১৪৫৬, এই মহাজাগতিক ঘটনার সঙ্গেই মিলে যাচ্ছে (Halley’s Comet)।
এটি শুধু ভারতেই হ্যালির ধূমকেতু (Halley’s Comet) নিয়ে প্রথম নির্দিষ্ট তারিখযুক্ত উল্লেখ নয়, এটি প্রমাণ করে যে সেই সময় এই মহাজাগতিক ঘটনা এতটাই তাৎপর্যপূর্ণ ছিল যে তা রাজা ও সমাজের ধর্মীয়, সামাজিক ও প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হয়েছিল।
তাম্রলিপিটি তৎকালীন ক্লাসিক তেলুগু ভাষায় রচিত, কিছু অংশে সংস্কৃত ব্যবহৃত হয়েছে। এতে জানানো হয়েছে, হ্যালির ধূমকেতু ও তার সঙ্গে দেখা দেওয়া উল্কাবৃষ্টিকে অশুভ প্রতিক্রিয়া মনে করে রাজা মাল্লিকার্জুন এই জমি দান করেন বৈদিক পণ্ডিত ও জ্যোতির্বিদ লিংগনার্যকে, যেন তার মাধ্যমে রাজ্য ও প্রজাদের জন্য শুভফল নিশ্চিত হয়।
এই ঐতিহাসিক আবিষ্কার শুধু মহাকাশবিদ্যার দিক থেকে নয়, ভারতীয় ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসেবে বিবেচিত হবে, কারণ এটি আমাদের জানায় কিভাবে মহাজাগতিক ঘটনাকে তখনকার সমাজে বাস্তব ও ধর্মীয় সিদ্ধান্তের সঙ্গে যুক্ত করা হতো।
উল্লেখ্য, হ্যালির ধূমকেতু সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল ১৯৮৬ সালে। এটি পৃথিবীর আকাশে আবার ফিরে আসবে ২০৬১ সালে।