ভাঙাচোরা এক মাটির কুঁড়ে ঘর। বর্ষা এলে প্রায়ই ঘরের মধ্যে জল ঢুকে পড়ে (NEET 2025)। সেই ছোট্ট ঘরে মা-ছেলের জীবনটা কেটেছে অশেষ কষ্টের মধ্যে। কিন্তু আজ সেই ঘরজুড়ে শুধুই আনন্দ আর গর্ব! কারণ, সেই অভাব-অনটনের ভিতর থেকেও দীপজ্যোতি সরকার তাঁর স্বপ্নপূরণে আরও একধাপ এগিয়ে গেলেন। সর্বভারতীয় নিট (NEET 2025) পরীক্ষায় দুর্দান্ত সাফল্য অর্জন করেছেন আলিপুরদুয়ারের পূর্ব শান্তিনগরের এই কৃতী ছাত্র।
দীপজ্যোতির জীবনের গল্প কোনও সিনেমার থেকে কম নয়। আলিপুরদুয়ার পুরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব শান্তিনগরের বাসিন্দা তিনি (NEET 2025)। ছোটবেলায় বাবা মারা যান কঠিন অসুখে। তখন গোটা সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে মা সরস্বতী দাস সরকারের কাঁধে। তিনি সেলাইয়ের কাজ করে কোনওরকমে সংসার চালাতে থাকেন (NEET 2025)। সেই অভাবের মধ্যে দিয়েই দীপজ্যোতির পড়াশোনা শুরু।
মেধার জোরে জায়গা করে নেন ‘জওহর নবোদয় বিদ্যালয়’-এ। তখন থেকেই দীপজ্যোতির স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার ন। নবোদয় থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর একটি স্কলারশিপের সুবাদে তিনি চলে যান পুনেতে। সেখানে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পড়াশোনার সুযোগ পান। প্রথমবার নিটে সফল না হলেও হাল ছাড়েননি। অবশেষে দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় সাফল্য আসে—৭২০ নম্বরের মধ্যে ৫১২ পেয়েছেন তিনি। তাঁর সর্বভারতীয় র্যাঙ্ক ৩৯,৪১৬, আর তফসিলি শ্রেণিভুক্ত হওয়ায় ক্যাটাগরি র্যাঙ্ক ৯১৪ (NEET 2025)।
এই অসাধারণ সাফল্যের পিছনে রয়েছে বাবার অকালমৃত্যুর যন্ত্রণা। টাকার অভাবে বাবার চিকিৎসা করাতে না পারার হতাশা থেকেই দীপজ্যোতির ডাক্তার হওয়ার সংকল্প আরও দৃঢ় হয়। তাঁর লক্ষ্য, ভবিষ্যতে গরিব মানুষদের চিকিৎসা করা, যাতে আর কেউ টাকার অভাবে হারিয়ে না যায়।
রবিবার নিজের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, পূর্ব শান্তিনগরের জিএসএফ প্রাথমিক স্কুলে, যেখানে দীপজ্যোতির পড়াশোনা শুরু হয়েছিল, সেখানেই স্কুলের শিক্ষক ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর শান্তনু দেবনাথ তাঁকে সংবর্ধনা জানান। কাউন্সিলর বলেন, “একটা গরিব পরিবারের ছেলে নিটে এত ভালো ফল করল! আমরা গর্বিত। পুরো ওয়ার্ড গর্বিত।”
দীপজ্যোতির মা সরস্বতী দেবী চোখের জল সামলে বলেন, “অনেক কষ্ট করে ছেলেকে পড়িয়েছি (NEET 2025)। আজ ও সেই কষ্টের সম্মান রেখেছে।” ছেলেকে ঘিরে তাঁর স্বপ্ন আজ পূর্ণতা পেয়েছে।
নিজের সাফল্য নিয়ে দীপজ্যোতি বলেন, “আমি ছোট থেকেই ডাক্তার হতে চাইতাম। বাবার চিকিৎসা করাতে না পারার যন্ত্রণা থেকেই ইচ্ছে জেগেছিল। এবার সেই স্বপ্নপূরণের দিকে এক ধাপ এগিয়ে গেলাম।”