দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন (Student Union) হয়নি। ছাত্রদের গণতান্ত্রিক অধিকার কার্যত খর্ব হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে। ক্যাম্পাসজুড়ে যেন অলিখিতভাবে ক্ষমতা ধরে রেখেছে শাসকদলের ছাত্র সংগঠন v। নেই কোনও বৈধ নির্বাচনী ম্যান্ডেট। ইউনিয়ন রুমে চলছে একচেটিয়া আধিপত্য। নির্বাচনের দীর্ঘ অনুপস্থিতি ঘিরে ফের চাপে রাজ্য সরকার।
সাম্প্রতিক সময়ে এই ইস্যুতে উত্তাল হয়ে উঠেছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় (Student Union) । নির্বাচনের দাবিতে শিক্ষামন্ত্রীকে ঘেরাও করেছিলেন ছাত্রছাত্রীরা (Student Union) । আবার কসবা-কাণ্ডে ধৃত মূল অভিযুক্তের বিরুদ্ধেও ওঠে ‘নির্বাচন না থাকার সুযোগে ক্ষমতার অপব্যবহার’-এর অভিযোগ। একাধিক ঘটনাই ঘুরে ফিরে একই ইঙ্গিত দেয়—গণতন্ত্রহীন ক্যাম্পাস, ছাত্রনেতাদের বেপরোয়া মনোভাব, আর ভোটের নামে এক অদৃশ্য অবরোধ (Student Union) ।
এই পরিস্থিতিতেই এবার ছাত্র সংসদ নির্বাচন ইস্যু পৌঁছে গেল আদালতে। রাজ্য সরকারকে কার্যত কড়া বার্তা দিল কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চ। আদালতের সাফ নির্দেশ, ছাত্র সংসদের নির্বাচনী বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ নিয়ে রাজ্য সরকার কী ভাবছে, তা আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে জানাতে হবে। অন্যথায় পরিণতি হতে পারে গুরুতর।
বিচারপতি সৌমেন সেন এদিন তাঁর পর্যবেক্ষণে স্পষ্ট করেন, সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গর্ভনিং বডিকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষাবিদদের সেই গর্ভনিং বডিতে অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষেও মত দেন তিনি। বিচারপতির মতে, এমন মানুষদের সেখানে রাখা প্রয়োজন যাঁদের থেকে ছাত্রছাত্রীরা কিছু শিখতে পারে।
বিশেষত যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত উপাচার্য রয়েছেন, সেখানে যেন দ্রুত ছাত্র সংসদের নির্বাচন সম্পন্ন হয়—এমন নির্দেশও দেন বিচারপতি সেন। কিন্তু আদালতের এই বক্তব্যের বিরোধিতা করে রাজ্যপক্ষের আইনজীবী তথা তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য রয়েছেন, সেখানে নির্বাচন করা যাবে না। কারণ, এটি রাজনৈতিকভাবে নিয়োজিত পদ।” তিনি আরও বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, এই অন্তর্বর্তী উপাচার্যরা কোনও নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।”
তবে রাজ্যের এই যুক্তি মানতে নারাজ বিচারপতি সৌমেন সেন। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, নির্বাচন সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি যথাসময়ে প্রকাশ করতেই হবে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বন্ধ রেখে কোনওরকম প্রশাসনিক তৎপরতা চলতে পারে না।
এই নির্দেশের ফলে ফের চাপে পড়েছে রাজ্য সরকার। ভোটের দাবিতে গর্জে ওঠা ছাত্রসমাজের চোখ এখন আদালতের শেষ সিদ্ধান্তের দিকে। আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে রাজ্য কী পদক্ষেপ নেয়, সেটাই হয়ে উঠবে চূড়ান্ত পরীক্ষার বিষয়।