বাংলায় এসআইআর নিয়ে এতদিন ধরে যে জল্পনা চলছিল, অবশেষে তার ইতি। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে স্পষ্ট জানালেন, ২৮ অক্টোবর, মঙ্গলবার থেকেই শুরু হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সহ ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা বা SIR (Special Intensive Revision)। নির্বাচনী মহলের মতে, লোকসভা নির্বাচনের আগে এই পদক্ষেপ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হতে চলেছে।
গত কয়েক মাস ধরেই বাংলায় এসআইআর নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তর্ক-বিতর্ক তুঙ্গে (SIR)। বিরোধী দল বিজেপি দাবি করে আসছে, এই সমীক্ষা চালু হলে বাংলার ভোটার তালিকা থেকে কোটি কোটি ভুয়ো নাম মুছে যাবে। তাঁদের অভিযোগ, এ রাজ্যে বিপুল সংখ্যক অনুপ্রবেশকারী ভুয়ো নথি দিয়ে ভোটার তালিকায় ঢুকে পড়েছেন। বিজেপি শিবিরের আশা, এসআইআর চালু হলে তাঁদের চিহ্নিত করা যাবে (SIR)।
এই প্রেক্ষিতেই সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার বলেন, “একজন ভোটারকে দেখাতে হবে, ২০০২, ২০০৩ বা ২০০৪ সালের ভোটার তালিকায় তাঁর বা তাঁর বাবা-মায়ের নাম ছিল কি না। কেউ যদি তা দেখাতে না পারেন, তাঁকে নোটিস পাঠানো হবে এবং পরে শুনানি হবে। সেখানে তাঁকে জানাতে হবে, কেন তখন তাঁর নাম ছিল না বা তিনি কোথায় ছিলেন।”
জ্ঞানেশ কুমারের কথায়, “যাঁরা এ দেশে এসে পরবর্তীকালে নথি বানিয়েছেন (SIR), তাঁরা পুরনো ভোটার তালিকার সঙ্গে নাম ‘লিংক’ করতে পারবেন না। তাই এই প্রক্রিয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।” তিনি আরও জানান, পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, তামিলনাড়ু, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, কেরালা, পুদুচেরি, আন্দামান, গোয়া ও লাক্ষাদ্বীপেও একসঙ্গে এই এসআইআর প্রক্রিয়া শুরু হবে। পুরো কাজ শেষ করে ২০২৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করা হবে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এর আগেও এই বিষয়ে সরব হয়েছিলেন (SIR)। তাঁর দাবি, “বিহারে এসআইআর করতে গিয়ে বহু রোহিঙ্গার নাম উঠে এসেছিল। বাংলাতেও একই ঘটনা ঘটবে।” শুভেন্দুর মতে, “ভোটার তালিকা থেকে ভুয়ো নাম বাদ দিতে হলে বাড়ি-বাড়ি গিয়ে সমীক্ষা করতেই হবে।”
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই সমীক্ষা কেবল প্রশাসনিক নয়, তা এখন রাজনৈতিক সংঘাতেরও প্রতীক। বিজেপি যেখানে এই প্রক্রিয়াকে অনুপ্রবেশকারীদের শনাক্তকরণের হাতিয়ার বলে দেখছে, তৃণমূল সেখানে অভিযোগ তুলছে, এটি বিজেপির রাজনৈতিক এজেন্ডার অংশ।
২৮ অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে প্রশিক্ষণ, এরপর বাড়ি-বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা যাচাই, আবেদন, আপত্তি, শুনানি—সব মিলিয়ে প্রায় চার মাসব্যাপী এই বিশাল কাজের শেষে ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশ পাবে চূড়ান্ত তালিকা। বাংলার রাজনীতিতে এই প্রক্রিয়া নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।








